আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠেয় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বল্প আয়ের প্রার্থীর হার বেড়েছে এবং কমেছে কোটিপতি হার। পাশাপশি প্রায় সাড়ে তিনশ প্রার্থীর বেশির ভাগই ব্যবসায়ী ও স্বল্পশিক্ষিত বলে জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট নগরীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য তুলে ধরেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ সরকার।
সংগঠনটি বলছে, এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ৫৬ শতাংশে, যেখানে ২০১৮ সালে ছিল ৫২ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই প্রবণতা নির্বাচনে অর্থের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষণ বলে অনেকে মনে করেন। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়ীদের আধিক্য এবং অন্যান্য পেশার প্রতিনিধিত্ব হ্রাস পাওয়া ইতিবাচক নয়। একইসাথে তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যও মঙ্গলজনক নয়।
তিনি বলেন, আমরা গণমাধ্যমের সহযোগিতায় প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ জনগণের কাছে তুলে ধরতে চাই। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কী ধরনের প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, সে সম্পর্কে ভোটাররা ধারণা পাবেন এবং ভোটারদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সকল প্রার্থী সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
এবারের নির্বাচনে মোট ৩৬৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের এক প্রার্থীর তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে না পাওয়ায় ৩৬৬ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে সুজন।
তাতে দেখা যায়, মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই প্রার্থীদের মধ্যে ৮৮ জন নারী, যাদের মধ্যে একজন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন।
সুজন বলছে, এবারের নির্বাচনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর হার কিছুটা কমে হয়েছে ২১ দশমিক ০৩ শতাংশ, যেখানে আগের বার এই হার ছিল ২১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
হলফনামা বিশ্লেষণ করে সুজন বলছে, বর্তমানে মামলা আছে- এমন প্রার্থীর হার সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশে। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ২৩ দশমিক ০৭ শতাংশ। অতীতে মামলা ছিল– এবার এমন প্রার্থীর হার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ০৪ শতাংশে, যা আগেরবার ছিল ২২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
সুজন জানিয়েছে, এবার স্বল্প আয়ের প্রার্থী ৮৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, যেখানে ২০১৮ সালে এ হার ছিল ৫৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর কোটিপতি প্রার্থীর হার কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, যেখানে আগের নির্বাচনে ছিল ৫ দশমিক ১২ শতাংশ।
যদিও প্রার্থীদের দাখিল করা সম্পদের তথ্য ‘প্রকৃত চিত্র’ নয় বলে মনে করে নাগরিক সংগঠন সুজন।
সুজন জানায়, প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই প্রতিটি সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেন না, বিশেষ করে স্থাবর সম্পদের। আবার উল্লেখিত মূল্য বর্তমান বাজার মূল্য না; এটা অর্জনকালীন মূল্য। কাজেই অধিকাংশ প্রার্থীর সম্পদের পরিমাণ প্রকৃত পক্ষে আরও অনেক বেশি।
দায়-দেনাগ্রস্ত প্রার্থীর হার বেড়েছে উল্লেখ করে সুজন জানিয়েছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়-দেনার হার ছিল ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ; এবারের নির্বাচনে সেটি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
আবার প্রার্থীদের মধ্যে আয়কর দাখিলকারীর হারও কমেছে। এবারের নির্বাচনে এই হার দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ০৭ শতাংশ। অথচ আগের নির্বাচনে আয়কর দাখিলকারীর হার ছিল ৪৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাঙ্গার প্রজেক্টের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মোজাম্মেল হক, সুজন সিলেটের সম্পাদক মিজানুর রহমান, হিসাব রক্ষক কুদরত পাশা।
মন্তব্য করুন