স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়িতে ঢুকতে গিয়েছিলেন ৭০ বছরের এক বৃদ্ধা। ৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ঢুকতে পারেননি তিনি। অভিযোগ বসতবাড়ির ওই সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে নিজের বৃদ্ধা মাকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দিয়েছেন ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলাম সৌরভ।
বাড়িতে ঢুকতে না পেরে নিজের একমাত্র ছেলের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলে বাড়ির গেটের সামনে ধরনায় বসেছেন বিলকিস আক্তার নামে ওই বৃদ্ধা মা। বৃদ্ধার অভিযোগ, সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে তার একমাত্র ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলাম সৌরভ তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না।
সোমবার (১৪ জুলাই) নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা যায়, বৃদ্ধা বিলকিস আক্তারের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে কানাডায় থাকেন। শহরের কাজীর মোড়ে বিলকিস আক্তারের স্বামী নিজের ১০ শতক জমির ওপর প্রায় ৩০ বছর আগে দুই তলা বাড়িটি নির্মাণ করেন। ওই বাড়ির দুতলার একটি ফ্লাটে তিনি বসবাস করে আসছিলেন।
বৃদ্ধা বিলকিস আক্তারের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর বসতবাড়ির জমি নিয়ে ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলামের সঙ্গে মা বিলকিস আক্তারের বিরোধ সৃষ্টি হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর আইন অনুযায়ী বিলকিস আক্তার ও তার তিন সন্তান বসতবাড়ির অংশীদার হন। অথচ মোস্তাফিজুল ইসলাম বসতবাড়ির পুরো সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে তার মা ও বোনদের তাদের অংশের জমি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে।
কিন্তু মা ও বোনেরা তাকে বসতবাড়ির জমি লিখে দিতে রাজি না হওয়ায় পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। ছেলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিলকিস আক্তার ২০২১ সাল থেকে অধিকাংশ সময় নওগাঁ শহরেই বড় মেয়ের বাড়িতে থাকছেন। এদিন সোমবার বেলা ১১টার দিকে নিজ বাড়ি দুতলার ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে সিঁড়ির মুখে লোহার কাচি গেইট এবং সেখানে তালা মারা দেখতে পান। তালা মারার বিষয়টি ছেলে মোস্তাফিজুলকে জানালে তিনি সাফ জানিয়ে দেন তাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য গেটে তালা ঝুলিয়েছেন।
এদিকে বাড়িতে ঢুকতে না-পেরে বাড়ির নিচতলার দোতলায় ওঠার সিঁড়ির সামনে গ্যারেজে বসে থাকেন বৃদ্ধা বিলকিস আক্তার। এমন দিনও দেখতে হবে তিনি কখনও ভাবেননি ।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কাজির মোড়ে ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় বিলকিস আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর তার একমাত্র ছেলে তার দেখাশোনা করেন না। বোনদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন। ছেলের কথা বসতবাড়ির যে অংশ আমার ও মেয়েদের আছে সেই অংশ তাকে লিখে দিতে হবে। কিন্তু আমরা তাকে জমি লিখে দিতে রাজি হইনি। এটা নিয়ে বিরোধ শুরু। ছেলের সাথে বনিবনা না হওয়ায় স্বামীর মৃত্যুর পর বড় মেয়ের বাড়িতেই থাকি। মাঝে মাঝে নিজের বাড়িতেও থাকি।
তিনি বলেন, সোমবার বেলা ১১টার দিকে ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে দেখি দোতলার সিঁড়িতে কাচি গেইট লাগিয়ে সেখানে তালা ঝুলানো। আমি ছেলেকে তালা খুলতে বললে সে আমাকে বলে, ‘তুই তো দুই আনার মালিক তুই পাথারে গিয়ে থাক। এই বাড়িতে তোর জায়গা হবে না।’ আমি আজকে রোজা আছি। বেলা ১১টা থেকে বসে আছি। আমি আমার নিজের বাড়িতে ঢুকতে চাই। আমার বড় মেয়ে এসেছিল তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি।
বিলকিস আক্তার বলেন, আমার স্বামী এই বাড়ি করেছেন। এটা আমার স্বামীর স্মৃতি। জীবনের বাকিটা সময় এই বাড়িতে কাটাতে চাই। এই বাড়িতে আমার মালিকানা কম বলে ছেলে এর আগেও কটাক্ষ করেছে। মেয়েরা আমার অপমান সইতে না পেরে তাদের অংশ আমাকে লিখে দিয়েছে। এই বাড়িতে কাগজে-কলমে আমার অংশই বেশি। কিন্তু আমার ছেলে পুরো সম্পত্তি হাত করার জন্য আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিতে চায় না।
বিলকিস আক্তারের বড় মেয়ের স্বামী ডা. আবুজার গাফফার বলেন, আমার শ্যালক এর আগেও শাশুড়িকে নির্যাতন করেছে। এমনকি গায়ে হাতও তুলেছে। এটা নিয়ে মামলাও রয়েছে। আমার শ্যালকের মধ্যে মানবতা বলে কিছু নেই। নিজের মাকে বলে, তুই দুই আনার মালিক, তুই গিয়ে পাথারে থাক। এই কথা শুনে ২০২৩ সালে আমার স্ত্রী ও শালিকা তাদের অংশের জমি মায়ের নামে লিখে দিয়েছে। কাগজে-কলমে আমার শাশুড়ি এখন বসতবাড়ির প্রায় ৭০ শতাংশের মালিক। অথচ তাকেই এখন বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
মাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেন ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলাম। তার দাবি, বসতবাড়ি নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে মারামারি ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। আমাকে প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছিল। ওই ঘটনার পর তার মা স্বেচ্ছায় মেয়ের বাসায় বসবাস করে আসছেন। আদালতের নির্দেশে বড় বোনের জিম্মায় আছেন। এখন তিনি আমার জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছি না। তিনি বাড়িতে থাকলে আবারও পারিবারিক কলহ ও মারামারি হতে পারে। যার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মন্তব্য করুন