আবু জুবায়ের উজ্জল, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৪:৫৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সেতুর পাটাতনই যেন মরণ ফাঁদ

ঝুঁকি নিয়েই ব্রিজ দিয়ে পার হচ্ছে ছোট যানবাহন। ছবি : কালবেলা
ঝুঁকি নিয়েই ব্রিজ দিয়ে পার হচ্ছে ছোট যানবাহন। ছবি : কালবেলা

টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার সড়কের বেইলি সেতুর পাটাতনই যেন চলাচলকারীদের মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুটি নির্মাণের পরপরই চারবার পাটাতন সরে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার স্বীকারও হয়েছিল। এ ছাড়াও সেতুর নরবড়ে পাটাতন যেন এখন চলাচলকারীদের প্রাণহানির শঙ্কা থাকলেও রয়েছে জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা।

সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার সড়কের দুল্যা এলাকায় বেইলি সেতু দিয়ে হরহামাশেই চলছে যানবাহন। সেতুর দু প্রান্তে বড় দুটি সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে সতর্কতামূলক। সেই সাইনবোর্ডকে তোয়াক্কা না করেই চলছে ছোট বড় যানবাহন। সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বেশিরভাগ পাটাতন সরে নড়বড় করছে। যানবাহন ওঠা মাত্রই সেতুটি ঝাঁকুনি দিচ্ছে।

জানা যায়, প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ ঝুঁকিতে পারাপার হচ্ছে। জেলা শহর থেকে একমাত্র যোগাযোগের সড়ক হচ্ছে টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার সড়ক। আর এই সড়কের দেলদুয়ার উপজেলার দুল্যা এলাকায় বেইলি সেতু। যা ১৯৮৯ সালে এই বেইলি সেতুটি নির্মাণ হয়। নির্মাণের পর থেকেই সেতুটি বিভিন্ন সময়ে পাটাতন সরে গেছে। এতে করে উপজেলার লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তির শিকারও হয়েছে।

২০১৭ সালে একবার সেতুটির পাটাতন সরে একটি ট্রাক ডোবায় পড়ে জান-মালের ক্ষতি হয়। অপর দিকে ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বরে সেতুটি আরও একবার পুরোপুরি পাটাতন সরে গিয়ে ডোবায় পড়ে যায়। সেসময়ও বেইলি সেতুর পাটাতন সরে গিয়ে যানবাহনসহ ডোবায় পড়ে কয়েকজন মানুষ আহত হয়।

স্থানীয় আব্দুর রহিম জানান, সেতুর দুপাশে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। এরপরও মানুষ সতর্ক হচ্ছে না। দেদারসে চলছে যানবাহন। তিনি আরও বলেন, এই সড়ক ছাড়া জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের বিকল্প কোনো সড়ক নেই। যার ফলে এই সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ বেশি। তিনি বলেন, এত বড় সেতুটি আমাদের কোনো কাজে লাগছে না। আমাদের উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাহত হচ্ছে। সেতুর ওপর দিয়ে কোনো ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। যার ফলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে।

টুকচানপুরের সাজাহান খান বলেন, সেতুটি কয়েকবার ভেঙে পড়ে উপজেলাবাসিকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আবারো ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বেইলি সেতুর পাটাতন যেন বারবার সরে গিয়ে মানুষের জন্য মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ভেঙে পড়ার আগেই কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করছে সেতুটি পুনর্নির্মাণের। তিনি বলেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে তাহলে প্রশাসনের টনক নড়ছে না কেন। এ অবস্থায় সেতুটি রাখা উচিত নয়।

টাঙ্গাইল দেলদুয়ার মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটো রিকশাচালক কামাল হোসেন বলেন, সেতু দিয়ে আমরা যখন পারাপার হই তখন সতর্ক ভাবেই চলি। কখন দুর্ঘটনা ঘটে সেটা তো বলা যাবে না। তবে আমাদের বিকল্প কোনো সড়ক নেই। এ ছাড়াও কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড লাগিয়েছে শুধু ভারি যানবাহন চলাচল নিষেধের জন্য। তিনি আরও বলেন, এই সেতু কয়েকবার ভেঙে পড়েছে। জোড়া তালি দিয়ে চলাচলের জন্য ব্যবস্থা করে দেয়। স্থায়ীভাবে সংস্কার না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সেতুটি এভাবে ফেলে রাখলে যানবাহন পারাপার হবেই। এদিকে সেতুর দু-প্রান্তে চলাচলের জন্য কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্ষার মৌসুমে সেতুর দু-প্রান্তে একবারে বন্ধ করে দিতে হবে। তা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা যেকোনো সময় ঘটতে পারে। বিগত দিনে বর্ষার মৌসুমে কয়েকবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে এবার কর্তৃপক্ষের কঠিন নজরদারি রাখতে হবে।

ডুবাইল ইউনিয়নের উজ্জল মিয়া জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মাঝে মধ্যেই যানজট হয়ে থাকে। আর সেই যানজট এড়াতে বিকল্প সড়ক হিসেবে বেছে নেওয়া হয় টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার সড়ক। এর ফলে কিন্তু মহাসড়কের বড় বড় যানবাহন এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে। তাই দ্রুত সেতুটি পুনর্নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

সিএনজি যাত্রী হ্যাপি আক্তার বলেন, ঝুঁকি নিয়েই আমাদের চলাচল করতে হয়। তা না হলে অনেক রাস্তা ঘুরে পাকুল্লা অথবা নাগরপুরের সড়ক দিয়ে জেলা শহরে যেতে হবে। এতে করে আমাদের যাতায়াতের খরচ তিনগুণ বেড়ে যাবে। সেই হিসাব করেই আমরা ঝুঁকিতে পারাপার হই।

দেলদুয়ার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এসএম ফেরদৌস বলেন, এই সেতুটি উপজেলাবাসির যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সেতু দিয়ে টাঙ্গাইল জেলার সঙ্গে মানিকগঞ্জ জেলার যোগাযোগ রয়েছে। এছাড়াও জেলার কয়েকটি উপজেলার সঙ্গে সেতুর মাধ্যমে মেলবন্ধন রয়েছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, সাটুরিয়া সখিপুর, বাসাইল ও স্থলচরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে।

তিনি আরও বলেন, দ্রুত নতুন একটি সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই। এই সেতুটির পিলার ঠিক থাকলেও পাটাতনগুলো সরে যায়। যার ফলে সেতুটি একদিকে হেলে পড়ে। এইভাবে পরপর চারবার ভেঙ্গে পড়েছে। এতে করে কয়েকটি উপজেলার মানুষের জান মালের ক্ষতি হয়।

জেলার দেলদুয়ার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাব্বির আহমেদ জানান, দেলদুয়ারের দুটি অংশে বেহাল দশা থাকায় উপজেলাবাসীর চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

এর মধ্যে দেলদুয়ার থেকে পাকুল্লার রোড এবং দেলদুয়ার থেকে জেলা শহরের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার রোড। এই রোডে দেলদুয়ারের দুল্যা এলাকায় একটি বেইলি ব্রিজ রয়েছে। সেই ব্রিজটি কয়েকবার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছিল। বর্তমানে ব্রিজটি ঝুঁকিতে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সেই বেইলি ব্রিজের জন্য আবেদন দেওয়া হয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে একটি প্রজেক্ট পাস হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই ব্রিজের কাজ ধরতে পারবো। এদিকে দেলদুয়ার থেকে পাকুল্লা রোডের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জমিয়তে ইসলামের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

গুরুতর সাইবার হামলার কবলে সিঙ্গাপুর

শ্রমিক স্বার্থে রাস্তায় নামতেও রাজি আছি : শ্রম উপদেষ্টা

রাজনৈতিক দলকে সেনাবাহিনীর বাস সরবরাহের দাবি মিথ্যা : আইএসপিআর

লন্ডনে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ৫৫

জামায়াতের অনেক দায় বিএনপি নিয়েছে : টুকু

মদপানে ৫ জনের মৃত্যু

‘শেখ হাসিনা স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিতাড়িত হয়েছেন’

ত্রয়োদশ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা প্রায় পৌনে ১৩ কোটি, ভোটকেন্দ্র ৪৫ হাজার

যুদ্ধের মধ্যেই গাজায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

১০

দেশে গণতন্ত্রের সংকট দেখা যাচ্ছে : মির্জা ফখরুল

১১

রাশফোর্ডকে নিয়ে বার্সেলোনার স্বপ্ন বাস্তবের পথে

১২

ইরানে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, নিহত ২১

১৩

জাপানি অভিনেত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার

১৪

বিশ্ব গণমাধ্যমে জামায়াতের সমাবেশ

১৫

‘কোনো ভুল সিদ্ধান্তে যেন ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের সুযোগ না পায়’

১৬

বিএনপিকে বিতর্কিত করতে চক্রান্ত চলছে : তানভীর হুদা 

১৭

ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ নির্মাণ শুরুর ঘোষণা দিল চীন, উদ্বিগ্ন ভারত

১৮

গঠনতন্ত্র ঠিক নেই এনসিপির, ১৫ দিনের সময়সীমা দিয়ে ইসির চিঠি

১৯

মোবাইলে গেমস খেলছিল ৪ শিক্ষার্থী, ডেকে নিয়ে পড়তে বসালেন ইউএনও

২০
X