খুলনায় বিষাক্ত মদ পানে আরও দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২০ জুলাই) সকালে তাদের মৃত্যু হয়।
মৃত যুবকরা হলেন- জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার থুকরা গ্রামে রবিউল গাজী (৩৫) ও রাসেল গাজী (৩০)।
এর আগে শুক্রবার রাত ও শনিবারে মৃত্যু হয় আরও পাঁচজনের। এ ঘটনায় অন্তত আরও চারজন খুলনার বিভিন্ন হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে এই ভেজাল মদের কারিগর হোমিও চিকিৎসক ৭৮ বছর বয়সী মোসলেম শেখকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মাতৃসদন হোমিও ফার্মেসির নামে একটি হোমিও চিকিৎসাকেন্দ্রের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল মদ বানাতেন তিনি। মোসলেম শেখ নিজেও অসুস্থ হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে কোনো এক সময় দলবেঁধে তারা থুকড়া বাজারে স্পিরিট জাতীয় অ্যালকোহল সেবন করেন। এতে একে একে অসুস্থ হয়ে পড়েন সবাই। ওই রাতে রবিউল গাজীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থা গুরুতর হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিউল গাজীর মৃত্যু হয়।
তবে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে পরিবারের সদস্যরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে বাড়ি নিয়ে যায় এবং ময়নাতদন্ত ছাড়াই শনিবার সকালে তার লাশ দাফন করা হয়।
অপরদিকে অসুস্থ অবস্থায় শনিবার বিকেলে রাসেল সরদারকে বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাসেলের মৃত্যু হয়। সকালে তার মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়।
এছাড়া এ ঘটনায় একই এলাকার আরও কয়েকজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে এনামুল সরদার, মোশাররফ বিশ্বাস, সবুজ, মুকুল বিশ্বাস, বাপ্পী, তুফান, জব্বার বিশ্বাসসহ অনেকে তথ্য গোপন রেখে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার ও শনিবার লনা নগরীতে অতিরিক্ত মদ্যপানে ৫ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৯ জুলাই) সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন বয়রা পূজাখোলা ইসলামিয়া কলেজ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত্য ব্যক্তিরা হলেন- বয়রা সেরের বাজার মোড়ের বাসিন্দা আব্দুর রবের ছেলে বাবু (৫০), বয়রা মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সামাদের ছেলে সাবু (৬০), বয়রা জাংশন রোড এলাকার বাসিন্দা গৌতম কুমার বিশ্বাস (৪৭), সোনাডাঙ্গার রায়ের মহল এলাকার বাসিন্দা আজিবর (৫৯) ও বয়রা পাবলিক কলেজ এলাকার বাসিন্দা তোতা (৬০)।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) হুমায়ুন কবির কালবেলাকে জানান, অতিরিক্ত মদ্যপানে ৫ জন মারা গিয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে আমরা এসেছি। পরে জানতে পেরেছি তারা তোতার হোটেলে বসে মদ পান করেছিল। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে তোতাও মারা গেছে। মৃত্যু মদ্যপান বা অন্য কোনো কিছুতে হয়েছে কিনা তা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে জানা যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি জানান, শুক্রবার রাতে কোনো এক সময় থুকড়া বাজারে দলবেঁধে এরা অ্যালকোহল সেবন করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে রবিউল ও শনিবার রাতে রাসেল মারা যান। বাকিরা নিজ বাড়িতে ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে হোমিও চিকিৎসাকেন্দ্রের আড়ালে ভেজাল মদ তৈরি করা মোসলেম শেখকে (৭৮) গ্রেপ্তার করেছে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আবু তারেক জানান, মোসলেম আলী অ্যালকোলি নামের মাদক, ঘুমের ওষুধ ও চুনের পানি দিয়ে ঘরে বসে মদ তৈরি করতেন। আড়ংঘাটা থানার পূর্ব বিল পাবলা মদিনা নগর এলাকার একটি ঘেরে বসে কয়েকজন সেই মদ পান করেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার রাতে একজন এবং শনিবার আরও ৪ জন মারা যান। রাতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মদ বিক্রেতাকে আটক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, স্থানীয়ভাবে ঘটনাটি শুনেছি। তবে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে কিছু জানানো হয়নি।
মন্তব্য করুন