আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, থাকতে হবে। আমরা কিন্তু নির্বাচনের টানেলে ঢুকে গেছি। সবাই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন। জনগণের দুয়ারে যান।
সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে কাজির দেউরী নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নূর আহমদ সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের নির্লিপ্ততায় সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের উদ্যোগে কেন্দ্র ঘোষিত এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এএম নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহারের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।
দলের কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে উঠান বৈঠক আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, প্রত্যেকের এলাকায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যান এবং উঠান বৈঠক করেন। মানুষ আপনার কাছে আসবে না, আপনাদের যেতে হবে। ওই আগের মতো বক্তব্য দিয়ে হবে না, জনগণের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হবে।
সবাইকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন শুরু হয়ে গেছে। সবাই মিলে কাজ করতে হবে। যার যার এলাকায় সবাই নির্বাচনী কার্যক্রমে নেমে যান। আমরা ভেবেছিলাম, শেখ হাসিনার পলায়নের পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সহনশীলতা, পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ, রাজনীতিতে ইতিবাচক একটা পরিবর্তন আসবে। দেশের মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, জীবন দিয়েছে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য। গণতান্ত্রিক পরিবেশ তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে, যখন একটা রাজনৈতিক দল অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতি ভিন্নমত পোষণ করেও সম্মান জানাবে, সহনশীলতা দেখাবে।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটা হচ্ছে, কিছু রাজনৈতিক দল তারা শিক্ষা নেয়নি। তারা শেখ হাসিনার কাছ থেকে ওই বদঅভ্যাসগুলো এখনো বাংলাদেশে চালু রাখতে চায়। শেখ হাসিনাকে এ ধরনের চরিত্রের জন্য বাংলাদেশের মানুষ বিতাড়িত করেছে। সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি বাংলাদেশের মানুষ আর গ্রহণ করবে না। সুতরাং আগামী দিনের রাজনীতি পরিষ্কারভাবে পরস্পরের সম্মানবোধের রাজনীতি হতে হবে, সহনশীলতার রাজনীতি হবে, একে অপরের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
আমীর খসরু বলেন, যারা ব্যক্তিগত চরিত্র হননে নেমেছেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অশালীন বক্তব্য রাখছেন, উসকানিমূলক বক্তব্য রাখছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বাংলাদেশের মানুষ আজকে ভিন্ন রাজনীতি দেখতে চায়, সুষ্ঠু, সম্মানজনক রাজনীতি দেখতে চায়। সুতরাং বিএনপি সেটাকে ধারণ করে, আমরা সেই পথে চলছি। সুষ্ঠু রাজনীতির পথে চলছি, সহনশীল রাজনীতির পথে চলছি, পরস্পর সম্মানবোধের রাজনীতির পথে আমরা চলছি।
আমীর খসরু আরও বলেন, এ যে অসম্মানজনক আচরণ এটার পেছনে উদ্দেশ্য একটা। উদ্দেশ্য হচ্ছে, আগামীদিনে বাংলাদেশের মানুষ যাদের ভোট প্রয়োগ করে, তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, সংসদ গঠন করে, সরকার গঠন করে, তার মালিকানা প্রয়োগ করবে ভোটের মাধ্যমে, তারা সেটা চায় না। তারা ভোট চায় না। তারা চায় অশান্তি! বাংলাদেশকে অশান্ত করার জন্য চায়। তবে ওই দিন এখন আর নেই। বাংলাদেশের মানুষ স্থিতিশীলতা, সংযম, সহনশীলতা ও উন্নয়ন চায়। মানুষ তার জীবনযাপন উন্নত করার অপেক্ষায় আছে। আগামীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে সরকার এনে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার অপেক্ষায় আছে।
বিএনপির এ কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মালিকানার কথা গত ১৭ বছর ধরে বলে যাচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থান। এ অবস্থানে থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এগোনোর কোনো সুযোগ হবে না। সে যে দলই হোক। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে দেশের মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন হয়েছে। তারা পরিবর্তন চায় এবং পরিবর্তনটা আসবে নির্বাচনের মাধ্যমে। আর তৃতীয় কোনো পথ নেই। নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ হবে, সরকার হবে, তারাই বাংলাদেশের পরিবর্তন আনবে মানুষের মেন্ডেট নিয়ে। জনগণের সমর্থন নিয়ে এ পরিবর্তন করবে। এর বাইরে কোনো পরিবর্তন করার কারও অধিকার নেই।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, একটি মহল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অনবরত মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়েও ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচনে যাদের ভরাডুবি হবে তারাই এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানে বাংলাদেশ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। সরকারকে বলতে চাই, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আওয়ামী লীগের আমলে কোনো নির্বাচন হয়নি। জনগণ ভোট দিতে পারেনি। তাই জনগণ এখন ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, বিএনপি শহীদ জিয়ার দল হিসেবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, ৭১-এর পরাজিত শক্তি একটি তরুণ সমাজের অংশকে বিভ্রান্ত করে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম চালাতে পরিচালিত করছে। এ তরুণদের একটি অংশ আমাদের সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। গণতন্ত্রের পথে থাকুন, বাংলাদেশের সঙ্গে থাকুন। দেশবিরোধী শক্তির খপ্পরে পড়ে নিজের মানসম্মান ও রাজনৈতিক অবস্থান হারাবেন না। স্বাধীনতাবিরোধী দলটি অতীতে যাদের সঙ্গে জোট করেছে তাদের পতন হয়েছে।
এতে বক্তব্য দেন- মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন জামান, মো. শাহ আলম, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মনজুর আলম চৌধুরী মনজু, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ ম জামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সিনিয়র সহসভাপতি মো. ইদ্রিস মিয়া, সহসভাপতি এমআর মনজু, মোছাম্মৎ শাহেনেওয়াজ চৌধুরী মিনু প্রমুখ।
মন্তব্য করুন