শরীয়তপুরে বুড়িরহাট আঞ্চলিক ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শরীয়তপুর সদর উপজেলার বুড়িরহাট বাজার এলাকার শরীয়তপুর চাঁদপুর মহাসড়ক এলাকায় বুড়িরহাট আঞ্চলিক ছাত্রলীগের সভাপতি জুম্মান বেপারী ও সাধারণ সম্পাদক তাওসিফ আহম্মেদের অনুসারীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের সমাবেশে লোক কম নেওয়াকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুর বুড়িরহাট ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ঢাকায় বসে কথাকাটাকাটি হয়। ওই ঘটনা জেলা ছাত্রলীগের নজরে এলে জেলা ছাত্রলীগ বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়। কিন্তু ওই ঘটনার জের ধরে ২ সেপ্টেম্বর তাওসিফের অনুসারীরা জুম্মানের চাচা আবদুস সামাদ বেপারিকে মারধর করেন। মারধরের বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য ৭ সেপ্টেম্বর সময় নির্ধারণ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। সালিশের একপর্যায়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র রামদা, ছেনদা ও শত শত হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীরা ইয়াসিন বেপারির হোটেলসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পরে খবর পেয়ে পালং থানা ও ডামুড্যা থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে উভয়পক্ষে ইয়াসিন বেপারি (৪০), কালু বেপারি (৩৪), মহাম্মদ আলী (৩০), হান্নান বেপারি (৩২), জুম্মন বেপারি (২৮), ইমন বেপারি (২৪), সিজান বেপারি (১৭), মালেক হোসেন (২৬) আতাউর রহমান (২০) ও আহাম্মদ আলীসহ (৩০) অন্তত ২০ জন মারাত্মক আহত হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে এদের মধ্যে আহাম্মদ আলীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আহত আবদুস সামাদ বেপারি জানান, ঢাকায় বসে আমার ভাতিজা জুম্মনের সঙ্গে তাওসিফের ঝামেলা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাকে মারধর করে তাহসিফের লোকজন। পরে বিষয়টি নিয়ে সালিশে বসলে তাওসিফের লোকজন হামলা চালায়।
আহত ইয়াসিন বেপারি বলেন, ছাত্রলীগের সমাবেশে লোক কম নেওয়া কেন্দ্র করে বুড়ির হাট আঞ্চলিক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের লোকজন রুদ্রকর ইউনিয়নের ৬ ওয়ার্ডের মেম্বার মহব্বত খান মাসুদ তার লোকজন নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। এরপর দুই গ্রুপের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
বুড়ির হাট আঞ্চলিক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুম্মন বেপারি বলেন, ঢাকার সমাবেশে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আমার কথাকাটাকাটি হয়। সেই ঘটনা জেলা ছাত্রলীগের নেতারা মীমাংসা করে দেয়। তারপর এলাকায় এসে আমার চাচাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে সাধারণ সম্পাদকের লোকজন।
বুড়ির হাট আঞ্চলিক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওসিফ আহম্মেদ বলেন, ঢাকার বিষয়টি জেলা ছাত্রলীগ ঢাকায় বসে মীমাংসা করে দিয়েছেন। আমি ঢাকায় অবস্থান করেছি। বুড়িরহাটে সামান্য হাতাহাতি হয়েছে শুনেছি। তবে কী নিয়ে হাতাহাতি হয়েছে তা আমি জানি না। আমি বা আমার কোনো লোক ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।
জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদউজ্জামান বলেন, আগের থেকেই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওই এলাকার দুপক্ষের লোকজনের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। মূলত সেখান থেকেই আজকের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
পালং মডেল থানা ওসি আক্তার হোসেন বলেন, ছাত্রলালীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত রয়েছে।
মন্তব্য করুন