মো. ওমর ফারুক, ভোলা
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৯ পিএম
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৫, ০১:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নদীর করাল গ্রাসে দিনমজুর থেকে নেমেছেন ভিক্ষাবৃত্তিতে

বৃদ্ধ নুরুল হকের বাড়ি। ছবি : কালবেলা
বৃদ্ধ নুরুল হকের বাড়ি। ছবি : কালবেলা

ভিটামাটি নেই, তিনবার নদীতে ভেঙে সর্বস্বান্ত। বেড়িবাঁধই যার শেষ আশ্রয়স্থল। দিনমজুর থেকে নেমেছেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। তার ওপর এক পা ভেঙে প্রায় দেড় মাস ঘরবন্দি। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

নেই চিকিৎসা, নেই কোনো ওষুধ, নেই খাবারের ব্যবস্থা। অর্ধাহারে অনাহারেই দিন কাটছে অসহায় এই দম্পতির। কেউ নেই দেখার মতো।

ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ফেরিঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধে বসবাসকারী নুরুল হক (৮০), স্ত্রী রেনু বেগম (৬৫)। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া স্বামী-স্ত্রীর দুজনের সংসার। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, থাকেন ঢাকায়।

জানা যায়, এই দম্পতির বাড়ি ছিল কাচিয়া ইউনিয়নের বাড়ৈপুর গ্রামে। ৩২ বছর আগে পৈতৃক ভিটামাটি, ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায় মেঘনা নদীতে। জায়গা হয় কোড়ারহাট নামক এলাকায় অন্যের জমিতে। ৭-৮ বছর পর আবারও নদী ভাঙার কবলে পড়ে পূর্ব ইলিশা কালুপুর আদর্শ গ্রামে ঠাঁই হয় তাদের।

তিন বছর যেতে না যেতেই আবার নদীভাঙনের কবলে পড়েন। সব হারিয়ে তিনি এখন সর্বস্বান্ত। অবশেষে কালুপুর বেড়িবাঁধে কোনোরকমে একটি ঝুপড়িঘরে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন।

চাঁদা তুলে ছোট একটি ঘর করে দেয় স্থানীয়রা। এক সময় গাজীপুর বাজারে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। সে বাজারটি এখন আর নেই। বয়সের কারণে কেউ আর ডাকে না তাকে। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। অভাব-অনটনে একপর্যায়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়েন নুরুল হক ও তার স্ত্রী রেনু বেগম।

এর মধ্যেই নুরুল হকের এক পা ভেঙে যায়। প্রায় দেড় মাস ঘরবন্দি। ইলিশা চডার মাথার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা মাঝেমধ্যে দু-এক বেলা খাবারের জোগান দিলেও বেশির ভাগ না খেয়েই অর্ধাহারে-অনাহারেই দিন কাটে অসহায় এই দম্পতির।

অসহায় দরিদ্র বৃদ্ধ নুরুল হক সাংবাদিক দেখে অশ্রুসজল চোখে বলেন, ‘বাড়ৈপুর, কাচিয়া, কালুপুর গাঙ্গে বাইঙ্গা সব নিয়া গেছে। তিন ভাঙার পর বাঁধের কিনারে থাহি। আমার কেও নাই দুইন্নাইত। একটা মাইয়া আছে ঢাকা থাহে। আমার পাও ভাইঙ্গা গেছে। আমি সরকারের কাছে টেয়া চাই, একটা ঘর চাই।’

৬৫ বছরের বৃদ্ধা রেনু বেগম বলেন, ‘আমার ঘর-দুয়ার নাই। বেড়ির পাড়ে ঘর উডাইয়া ভাঙা ঘরো থাহি। চলতাম পারি না খাইতাম পারি না। বেডায় পাও ভাইঙ্গা অচল। আমারে কিছু সাহায্য দেন, ঘর-দুয়ার উডাইয়া দেন আল্লার ওয়াস্তে।’

বাবা-মাকে দেখতে আসা নুরুল হকের মেয়ে রহিমা বলেন, ‘স্বামী নাই, একটা মাইয়া লইয়া ঢাকা অনেক কষ্টে থাহি। বাবা-মারে দেহার কেউ নাই। ঘর নাই দুয়ার নাই। না খাইয়া থাহে। সরকার আমাগোরে একটু সাহায্য করলে খাইয়া লইয়া বাবা-মার জীবনডা বাঁচত।’

এ পরিবারের বিষয়ে পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের বর্তমান প্রশাসক মিথুন চক্রবর্তী বলেন, আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম নুরুল হক একজন অসহায় মানুষ। উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যাচাই-বাছাই করে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করব।

এই অসহায় পরিবার সম্পর্কে জানতে পেরে ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, একাধিকবার নদীভাঙনের কারণে নুরুল হক নিজস্ব ভিটামাটি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়েছেন। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, তাকে দেখার মতো কেউ নেই। আমরা নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় তাকে সহায়তা করা যায় কি না, তা দেখব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: নদী ভাঙন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী বশর ও মাসুদের বিরুদ্ধে মামলা

ইসির ১২ কর্মকর্তাকে বদলি

রমজানে ১০ পণ্য আমদানি নিয়ে নতুন নির্দেশনা

১১ বছর পর জামায়াত কর্মীর মরদেহ উত্তোলন

দেখামাত্র সন্ত্রাসীদের গুলির নির্দেশ সিএমপি কমিশনারের

বগুড়ায় হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

মুশফিককে ছাড়িয়ে টেস্টে নতুন উচ্চতায় লিটন দাস

বাংলাদেশ থেকে এবার কতজন হজে যেতে পারবেন, জানাল মন্ত্রণালয়

এক বছর ধরে বিদ্যুৎহীন ২ হাজার পরিবার

‘আমগরে কেডা খাওয়াইবো, কেডা দেখবো’

১০

শরীয়তপুরে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ দুই যুবক গ্রেপ্তার

১১

রাউজান থেকে এনিসিপির মনোনয়ন নিলেন মোহাম্মদ মহিউদ্দীন জিলানী

১২

শিশু ধর্ষণের চেষ্টা, চড়-থাপ্পড়ে মীমাংসা

১৩

বরিশালে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

১৪

চুয়েটে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপিডিশন ২০২৫’-এ প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা

১৫

অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় ভোজ্যতেলে ভিটামিন সমৃদ্ধকরণ জরুরি

১৬

৪৪তম বিসিএসের পরিবর্ধিত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১৬৭৬

১৭

আজহারীর বই নকলের অভিযোগ, তদন্তে ডিবি

১৮

শিশুদের জীবন বাঁচিয়ে রেকর্ড গড়লেন পলক

১৯

‘ফ্যাসিস্ট’ অভিযোগে বিরক্ত পিএসজি ফুটবলার

২০
X