বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, এ দেশে নির্বাচন হবে এবং আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই নির্বাচন হবে। নির্বাচনকে ঠেকানোর মতো কোনো শক্তি নাই। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছয় দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে এ সমাবেশ আয়োজন করে খুলনা মহানগর ও জেলা কমিটি। সমাবেশ পরবর্তী শোভাযাত্রা কর্মসূচি থাকলেও জনদুর্ভোগ বিবেচনায় সেটি বাতিল করা হয়। এ ছাড়া কর্মসূচি শেষে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তার পছন্দের প্রার্থী ও দলকে ভোট দেবে। দেশের মানুষ যাকে পছন্দ করবে তাকে প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসনে বসাবে। অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন নির্বাচন হবে না। এখন কেউ কেউ জটিলতা সৃষ্টি করছে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বিএনপিকে ১৬ বছর ধরে নির্যাতন করেছে, জেলখানায় নিয়েছে। প্রায় ১০ হাজার মানুষকে হাসিনা হত্যা করেছে। শেখ মুজিব ৭২ থেকে ৭৫ এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল। দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল। বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল।
বিএনপির এ নেতা বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণার কথা ছিল শেখ মুজিবের। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি তার আগেই আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তারপর জিয়াউর রহমান নিজে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুধু তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাই করেননি, নিজের স্ত্রী, সন্তান, পরিজনদের ফেলে রেখে সেপাই-জনতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর যার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের কোনো সম্পর্ক ছিল না সেই মুজিব পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে ক্ষমতা দখল করেছিল। এর পরের ইতিহাস বড়ই নির্মম, বড়ই ভয়ংকর।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, পাশের প্রতিবেশী দেশ গণহত্যাকারী ও লুটেরাকে আশ্রয় দিয়েছে। এইজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আন্দোলনকারী শক্তি আমরা যে যেখানে আছি আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব যখনই হুমকির সম্মুখীন হয়েছে তখনই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের সবাই এগিয়ে এসেছে। ২০২৪ সালের এই গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। এ আন্দোলনেও আমাদের নেতা নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু এ আন্দোলন যখন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছিল তখন এ সরকার একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকের মাধ্যমে আবারও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের আকাশে উদিত হয় এক নতুন সূর্য। এর মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি এ নির্বাচনকে, আমাদের গণতন্ত্রকে বিভিন্নভাবে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরাজিত মাফিয়া শক্তি যারা এই দেশের গণতন্ত্র চায় না দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির তথ্য সম্পাদক বলেন, সারা বাংলাদেশের মানুষ ভোট যুদ্ধে নেমে গেছে। একটি উৎসবমুখর পরিবেশে এবার বাংলাদেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোট নিয়ে কোনো সংশয় নেই। যদি ভোট নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করা হয়, সে যত বড় অপশক্তিই হোক না কেন গণঅভ্যুত্থানে যেভাবে ফ্যাসিবাদকে পতন করা হয়েছিল একইভাবে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশের মানুষ রুখে দাঁড়াবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু বলেন, যদি বিএনপির সৃষ্টি না হতো তাহলে আওয়ামী দুঃশাসনের পতন হতো না। যদি বিএনপির সৃষ্টি না হতো তাহলে বাংলাদেশকেও হয়তো সিকিম কিংবা ভুটানের মত পরাধীনার তার ভাগ্য নিয়ে শিকলে আবদ্ধ থাকতে হতো।
তিনি আরও বলেন, আমরা যে অবস্থায় আছি অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত অব্যাহত আছে। আবারও যদি কোনো কারণে বিএনপি পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পরাজিত হবে। একটি ফ্যাসিবাদী দল বাংলাদেশ থেকে পালালেও এখনো কিছু কিছু দল আছে যাদের কথায়, আচরণে আমরা ফ্যাসিবাদের উগ্রবাদের গন্ধ পাই। এ সকল রাজনৈতিক দলের বক্তব্যে আমরা সাম্প্রদায়িকতা ও ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই। তাই এ সকল ষড়যন্ত্রকে রুখতে হলে বিএনপিকে আরও শক্তিশালী হতে হবে।
বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে যেমন আমরা হাসিনাকে হটিয়েছি তেমনি তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আগামী নির্বাচনে জয় লাভ করে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান মন্টু, খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হোসেন বাবু, খুলনা জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম।
মন্তব্য করুন