যশোরের কেশবপুরের বুড়িভদ্রা নদীপাড়ের মাটি অবৈধভাবে কেটে রাস্তা নির্মাণ করছিলেন এক ইউপি মেম্বার। মাটি কাটা কাজে বাধা দেওয়ায় উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসককে হুমকি দেওয়া হয়।
খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই প্রশাসককে উপজেলা পরিষদে নিয়ে যান। ঘটনা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ইউপি প্রশাসক।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) পরিষদে অফিস করাকালীন সময়ে পরিষদের সামনে অবস্থিত বুড়িভদ্রা নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে ট্রলিতে করে নিচ্ছিলেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার কামরুল ইসলাম। বিষয়টি স্থানীয় লোকজন প্রশাসককে জানালে তিনি তাদেরকে ভূমি অফিসে বলার জন্য পরামর্শ দেন।
পরবর্তীতে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব বুড়িভদ্রা নদীর পাড় হতে অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধ করে দেন।
এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার কামরুল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদে এসে তার (প্রশাসক) কক্ষে গিয়ে নদীর পাড় থেকে মাটি কাটা বন্ধ করেছেন কেন জানতে চান। এ বিষয়ে তার (প্রশাসক) সংশ্লিষ্টতা নেই জানালেও তিনি (ইউপি মেম্বার) তাকে হুমকি দেন এবং কীভাবে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক গিরি করেন তিনি সেটা দেখে নেবেন বলেও জানান।
মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস বলেন, সোমবার এ ঘটনার পর উপজেলা পরিষদে ফিরে বিকেলে ইউপি মেম্বার কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘটনা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদে গেলে আমাকে হেনস্তা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন ওই ইউপি মেম্বার।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ নেওয়াজ বলেন, ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে বুড়িভদ্রা নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই স্থান থেকে ট্রলিতে করে চার গাড়ি মাটি কাটা হয়েছিল।
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি মেম্বার কামরুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একটি কাজ পেয়ে পূজা মণ্ডপে যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করা হচ্ছিল। ওই রাস্তার জন্য মাটির প্রয়োজন হলে নদীর পাড় ঠিক রেখে ট্রলিতে করে কিছু মাটি আনা হয়। প্রশাসককে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। তাছাড়া তাকে হেনস্তা করার কোনো কথাও বলা হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেকসোনা খাতুন বলেন, মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক সুদীপ বিশ্বাসের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে ওই ইউপি মেম্বারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিন কার্য দিবসের ভেতরে ইউপি মেম্বারকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশের জওয়াব পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কাদের বিশ্বাস পরিষদে আসছিলেন না। দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় পরিষদের কার্যক্রম সচল রেখে জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত বছর ১৮ ডিসেম্বর যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি পত্রে জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন