বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা আর অসুর বিনাশের আরাধনার মধ্য দিয়ে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীতে কুমারী পূজা উদযাপন হয়েছে। দেশের মধ্যে একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
পূজায় এবার কুমারী হিসেবে অদিত্রী দাস দিশানকে দেবী আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়। এ সময় ভক্তরা কুমারী দেবীকে প্রণাম করে নিজেদের সুখ, শান্তি এবং দেশের মঙ্গল কামনা করেন।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার পর ডুয়েট ক্যাম্পাসের অস্থায়ী মন্দিরে কুমারী পূজা শুরু হয়।
ঢাক-ঢোলের তালে তালে আর উলু ধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় কুমারী পূজা। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস এই পাঁচ উপকরণে দেওয়া হয় ‘কুমারী’ মা’-এর পূজা। অর্ঘ্য দেওয়ার পর দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। পূজার শেষে প্রধান পূজারি দেবীর আরতি নিবেদন করে দেবীকে প্রণাম করেন। পূজার মন্ত্র পাঠ করে ভক্তদের মধ্যে চরণামৃত বিতরণের মধ্য দিয়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর শেষ হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
এর আগে, জুলাই নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করেন পূজারিরা।
পূজারিরা বলছেন, কাম, ক্রোধ নিবারণ করে সকল নারীকে মাতৃরূপে শ্রদ্ধা জানাতে এই কুমারী পূজা। এর মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করে থাকেন তারা। পূজা উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন সব সময় খোঁজখবর নিয়েছে। এখন পর্যন্ত সুন্দর পরিবেশে আমাদের পূজা উদযাপন হচ্ছে।
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণী অর্চনা সংসদ প্রতিবছর কুমারী পূজার আয়োজন করে। এ সময় সংগঠনের সভাপতি হৃদয় চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘সব নারীর মধ্যেই তিনি (দুর্গা দেবী) মাতৃরূপে আছেন। তিনি সব দুর্গতি নাশিনীও। সবার মধ্যে এই উপলব্ধি জাগ্রত করতেই কুমারী পূজা হয়। পূজায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
নিজ মেয়েকে দেবীদুর্গা রূপে দেখে নিজেকে সার্থক হিসেবে আখ্যায়িত করে কন্যার জন্য আশীর্বাদ কামনা করেন অদিত্রী দাস দিশানের মা বিথী রানী দাস। এসময় সমাজে বিরাজমান অসুর ধ্বংসের প্রার্থনা করে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে যেন ভয় না পায় এজন্য তাকে কুমারী দেবীরূপে সাজিয়েছি। মাতৃরূপ সব সময় শ্রদ্ধার এবং সম্মানের।’
‘কুমারী দুর্গা’ অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে অদিত্রী দাস দিশান বলেন, ‘সবাই আমাকে দেখতে এসে পুজো দিয়েছে, আমার খুবই ভালো লাগছে।’
পুরোহিত মিলন দাস অধিকারী বলেন, ‘মা দুর্গা অসুর বিনাশে ধরায় আগমন করেন। শাস্ত্রমতে, এদিন কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে সকল নারীকুলকে দেবীর সম্মানে ভক্তরা পুজো দেয়।’
গাজীপুর শাহীন ক্যাডেট একাডেমি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অদিত্রী দাস দিশান। ৭ বছর বয়সী দিশান রতন দাস ও বিথী রানী দাস দম্পতির মেয়ে। গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মঠ এবং পূজামণ্ডপেও কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মন্তব্য করুন