পরিবারের ওপর চাপ কমাতে ও পড়ালেখার খরচ জোগাতে মাঝেমধ্যে রিকশা চালান সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান জিহাদ (১৫)। মঙ্গলবার রাতে সে রিকশা নিয়ে যথারীতি বাহিরে যান তিনি রোজগারের জন্য। তবে এদিন আর মায়ের কাছে ফিরতে পারেননি তিনি। ছিনতাইকারীরা তাকে খুন করে ভাড়ায় চালিত অটোরিকশাটি নিয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে।
বুধবার (০১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌরসদরের শেখ নগর এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
খুনের শিকার হাবিবুর রহমান জিহাদ (১৫) পৌর সদরের সুবাহানবাগে তার মায়ের সঙ্গে থাকতেন ও ওই এলাকায় অবস্থিত জিনিয়াস স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে পুলিশকে খুনের বিষয়ে জানালে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সীতাকুণ্ড পৌরসদরের শেখ নগর এলাকার ময়লার স্তূপের পাশে একটি ডোবা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। লাশটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জিহাদের মা তহুরা স্বামী পরিত্যক্ত হওয়ায় দুই সন্তানকে নিয়ে পৌরসদরের সুবাহানবাগ থাকেন। জিহাদের আরেক ভাইয়ের নাম জিহান। দুই ভাই পড়ালেখা করে। জিহাদ সপ্তম শ্রেণিতে জিহান ষষ্ঠ শ্রেণিতে। জিহাদের মা মানুষের ঘরে কাজ করে কোনোভাবে দুই ছেলেকে মানুষ করার চেষ্টা করছেন। এদিকে মায়ের উপর চাপ কমাতে ও পড়ালেখার খরচ জোগাতে মাঝেমধ্যে রিকশা চালান জিহাদ। মঙ্গলবার রাতে সে রিকশা নিয়ে বাহির হলে ছিনতাইকারীরা তাকে খুন করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটি নিয়ে যায়।
রিকশামালিক আকবর বলেন, জিহাদের চাচা হোসাইন রাত ৮টার দিকে রিকশাটি বন্ধ করে গ্যারেজে রেখে দেন। রাত ৯টার দিকে পুনরায় রিকশাটি নিয়ে বাহির হন জিহাদ। কিন্তু রাত দুইটা বাজেও রিকশাটি গ্যারেজে না আসার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। কিন্তু ছিনতাইকারীরা উপজেলার মাদামবিবিরহাটে রিকশা বিক্রি করতে গেলে সেখানে রিকশার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে রক্ত পড়ে থাকতে দেখে ক্রেতার মনে সন্দেহে জাগে। ক্রেতা বাপ্পিকে জিজ্ঞেস করলে সে উল্টাপাল্টা কথা বলে।
এদিকে খুন হওয়া জিহাদের নাম্বারে বারবার কল দিলে মোবাইল রিসিভ করে বাপ্পি। এক পর্যায়ে আকবরের সঙ্গে কথা হয় ক্রেতাপক্ষের সঙ্গে। ঠিকানা অনুযায়ী আকবর দ্রুত চলে যায় ঘটনাস্থলে এবং বাপ্পিকে আটক করেন। বাপ্পি খুনের ঘটনা স্বীকার করে এবং জড়িতদের নাম বলেন। পরে স্থানীয়রা গণধোলাই দিয়ে বাপ্পি ও রাজীবকে পুলিশে সোপর্দ করেন।
এদিকে থানার আঙিনায় এসে ভাইকে হারিয়ে কাঁদতে থাকেন জিহাদের ছোট ভাই জিহান। তিনি বলেন, ‘একটি রিকশার জন্য আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে খুনিরা। বর্তমানে একটি জীবনের মূল্যের চাইতেও কি রিকশার মূল্য অনেক বেশি। যারা আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের আমি ফাঁসি চাই।’
এদিকে জিহাদের খুনের ঘটনায় দুপুর একটার দিকে সীতাকুণ্ড অটোরিকশার শ্রমিক দলের ব্যানারে খুনিদের ফাঁসি চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষোভকারীরা বলেন, প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণেই খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই বেড়েই চলেছে।
এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) লাবিব আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সকালে একটি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। মরদেহের শরীরের বিভিন্ন অংশে ও গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে।’
এদিকে প্রশাসনে নীরব ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী স্বাভাবিক রয়েছে।’
মন্তব্য করুন