গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বাল্যবিয়ে করতে এসে কারাগারে গেলেন বর

নাটোরের গুরুদাসপুরের নাজিরপুর নতুনপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়। ছবি : কালবেলা
নাটোরের গুরুদাসপুরের নাজিরপুর নতুনপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়। ছবি : কালবেলা

প্যান্ডেল ঘেরা বাড়িতে চলছিল বাল্যবিয়ের আয়োজন। বাজছিল বিয়ের গান। কেউ কেউ টেবিলে বসে ভোজও সারছিলেন। অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া ইতি খাতুনকে ঘটা করে বিয়ে করতে এসেছিলেন বরও। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অভিযানে মুহূর্তেই বদলে যায় বিয়েবাড়ির সেই চিত্র।

বাল্যবিয়ে করতে আসার অপরাধে বর বাহারুল ইসলামকে (২৫) দুই মাসের জেল দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ। একই সঙ্গে বরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। বুধবার সন্ধ্যায় গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর নতুনপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে বাল্যবিয়েটি বন্ধ করা হয়। শিক্ষার্থী ইতি খাতুন ওই গ্রামের শামসুল হকের মেয়ে।

নাজিরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইতি খাতুনকে বুধবার (০১ অক্টোবর) বিয়ের সাজে সাজানো হয়েছিল।

বাল্যবিয়ের কবল থেকে রক্ষা পেয়ে ইতি জানায়, অনেক দূর পর্যন্ত লেখা-পড়ার ইচ্ছে আমার। কিন্তু পিতামাতা আর প্রতিবেশীর চাপে পড়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল। সময় মতো এসে বাল্যবিয়েটি বন্ধ করায় ইউএনওর প্রতি কৃতজ্ঞতা। এখন আবার বিদ্যালয়ে যেতে পারব, সহপাঠীদের সঙ্গে খেলা করতে পারব ভেবে আনন্দ হচ্ছে।

বাল্যবিয়ে করতে আসা বর বাহারুল ইসলাম গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামের নবির উদ্দিনের ছেলে। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। মেয়ে দেখতে ভালো হওয়ায় দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব আলী।

তিনি বলেন, ‘বার বার বাধা নিষেধ করলেও কন্যার পিতা সামসুল তা মানেননি।’

নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, দূরন্ত ও চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে ইতি শিক্ষার্থী হিসেবে খুব ভালো। শুধু পড়াশোনা নয়, খেলাধুলাতেও পারদর্শী। অথচ খেলাপড়া বন্ধ করে জোর করে বিয়ে দিচ্ছিল পরিবারের লোকজন। শিক্ষক হিসেবে তিনি বাল্য বিয়েটি বন্ধের জন্য চেষ্টা করেছেন। বিয়ে বন্ধ করে বরের জেল-জরিমানায় তিনিও খুশি। বরের জেল-জরিমানার বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে আলোচনা করা হবে। যাতে বাল্যবিয়ের সম্পর্কে জেনে নারী শিক্ষার্থীরা এর বিরুদ্ধে আরও সাহসী হতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ কালবেলাকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিয়ে বাড়িতে অভিযান চালান তিনি। এ সময় বরকে হাতেনাতে ধরা হয়। বাল্যবিয়ের শাস্তি হিসেবে ২ মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে মেয়ের পরিবারকেও।

তিনি বলেন, বাল্যবিয়ের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে অল্প বয়সে মা হওয়া। মা হতে গিয়ে অনেক সময় জরায়ু ছিঁড়ে যাওয়াসহ জরায়ুতে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে। জেনে না জেনে কিশোরীদেরকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে পরিবারগুলো। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও এর কুফল নিয়ে বিদ্যালয়গুলোতে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করবেন তিনি।

কিশোরীরা নিজের বাল্যবিয়ে রোধ করলে পুরস্কারও দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দশমীতে দুর্গার বিদায়ের আগে কেন হয় সিঁদুর খেলা?

মোংলা থেকে ৭৩৫ কিমি দূরে গভীর নিম্নচাপ, সন্ধ্যার মধ্যে ঝড়ের পূর্বাভাস

ফ্রিজের ওপরে এই ৯ জিনিস একদমই রাখা উচিত নয়

টেকনাফের গহিন পাহাড় থেকে ২১ জনকে উদ্ধার

সপ্তাহে ২ দিন ছুটিসহ ব্র্যাক এনজিওতে চাকরির সুযোগ

আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে লাহোর, ঢাকার অবস্থান কত? 

বিশ্বকাপেও এশিয়া কাপের মতো আচরণ করবে ভারত!

কক্সবাজারে পর্যটকদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

ইসরায়েলের সব কূটনীতিককে বহিষ্কারের নির্দেশ কলম্বিয়ার

সবগুলোকে নিয়ে সংসার করব: স্বস্তিকা মুখার্জি

১০

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ আজ

১১

কাঁচপুর সেতুতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

১২

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১৩

বাল্যবিয়ে করতে এসে কারাগারে গেলেন বর

১৪

ইসরায়েলের বাধা সত্ত্বেও গাজার দিকে যাচ্ছে ৩০ নৌযান

১৫

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

১৬

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব

১৭

তারকা ফুটবলারকে ছাড়া বড় চমক রেখে ব্রাজিলের দল ঘোষণা

১৮

ফের মা হতে চলেছেন সোনম কাপুর

১৯

অপরূপ সৌন্দর্যের জলফড়িং পিঙ্গল বুনো উকরি

২০
X