বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, সিরাজগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো দিন রাজপথ ছেড়ে দেয়নি। বিএনপির কোনো নেতা যারা আন্দোলনে ছিল তারা অন্যকোনো দিকে যায়নি।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুরে সিরাজগঞ্জ শহরের রেলগেট এলাকায় ১, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমি যখন বিদেশে ছিলাম আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু প্রতিটি আন্দোলনের ছক তৈরি করে সকালে উঠেই আন্দোলন শুরু করেছে। আপনারা দেখেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি একজন মহিলা। তাকে কীভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে গুলি করে দমন করা যায়নি, রাজপথে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে দমন করা যায়নি, সে কোনো নেতাকর্মীকে ফেলে যায়নি।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট পরিবর্তনের পরে আমরা যাদের রাজপথে দেখিই নাই, তাদের হঠাৎ করে আবির্ভাব হয়েছে। এই দলটি একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতা করেছিল। তারা আল বদর, আল সামস বানিয়ে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। দুঃখের বিষয় হলো, ডাকসু নির্বাচনের পরে দেখলাম ওই বুদ্ধিজীবী বদ্ধভূমিতে গিয়ে রবীন্দ্র সংগীত গায়। এ কেমন ভণ্ডামি, হত্যা করে হত্যার ক্ষমা না চেয়ে বদ্ধভূমিতে গিয়ে রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে দেখাচ্ছো— আজকে তোমরা বাঙালি।
সাবেক এই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এই ১৬ বছরের আন্দোলনে তারা ছিল না। তাদের নেতাদের ফাঁসি দিয়েছে, হরতাল দিয়ে মাঠে থাকে নাই। তারা কি করেছে আওয়ামী লীগের ভেতরে ঢুকে গেছে, ছাত্রলীগে ঢুকে গেছে। আমাদের ছাত্রদলের ছেলেরা যতবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে গেছে তাদের পেটানো হয়েছে, হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আবার ৫ আগস্টের পরে যার যার রূপ নিয়ে তারা ফিরে এসেছে। আমরা তো এ রকম ছলনার রাজনীতি করি না। আমাদের ছাত্রদলও করে নাই। ১৬ বছর ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারে নাই। সুতরাং, ঘাপটি মেরে থেকে নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করবে এই স্বপ্ন তারা দেখছে। তার কারণ আছে, তারা ছাত্র-জনাতর গণঅভ্যুত্থানের পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে শুরু করে কলেজের অধ্যক্ষসহ প্রত্যেক জায়গায় তাদের লোক বসিয়েছে।
তিনি বলেন, একটা দল নেমেছে যাদের আমাদের চেয়ারম্যান বলেন অদৃশ্য ফ্যাসিবাদ। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতা করেছিল, পাকিস্তানের সহকারী বাহিনী হয়েছিল। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। তারা আজকে বলতে চায়, ভারত নাকি আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করেছে। ভুলে যান, পাকিস্তানের মৃত্যু হয়ে গেছে, পাকিস্তান আর হবে না।
টুকু আরও বলেন, ১৯৫৮ সালে ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান করার পর ইসলামকে হাতিয়ার করে বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ শুরু করে। আমাদের অর্থ নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানকে গড়ে। তখন বাঙালিরা বুঝেছিল তেলে আর জলে মিলবে না। তাই তাদের অধিকারের জন্য ’৭০-এর নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের মানুষ হৃদয় নিংড়িয়ে ভোট দিয়েছিল, আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছিল। জয়লাভ করার পরেও যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করে নাই। তখনই বাংলাদেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছিল।
তিনি বলেন, সুতরাং পাকিস্তান ভাঙার জন্য ভারত আমাদের ভুল বুঝিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করিয়েছে এই বয়ান আপনারা দিতে পারেন, কারণ আপনারা বিরোধিতা করেছিলেন। আপনাদের চরিত্র এমন কোনো দিনও মানুষের সঙ্গে থাকেন নাই। আপনারা যখন পাকিস্তান হয়েছিল, তখন পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছিলেন, পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছিল আবুল আলা মওদুদী।
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি সেলিম ভুইয়ার সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুন্সী জাহেদ আলমের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু। এ সময় আরও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদুজ্জামান মুরাদ এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস প্রমুখ।
মন্তব্য করুন