চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহেলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শিলনের বিরুদ্ধে জোর করে মাদক ব্যবসা করানোর অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক দম্পতি।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন করেন জেহালা ইউনিয়নের মুন্সিগঞ্জ গ্রামের জালাল উদ্দীনের ছেলে সজল হোসেন ও সজলের স্ত্রী মোছা. রিক্তা।
সংবাদ সস্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সজলের স্ত্রী মোছা. রিক্তা। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার স্বামী সজল হোসেন আগে মাছের ব্যাবসা করে জীবিকা অর্জন করত। মাঝে ২০১৭ সাল থেকে শিলন এর সঙ্গে চলাফেরা শুরু করে। তারপর ২০২১ সালের প্রথম দিকে শিলন চেয়ারম্যান হয়। চেয়ারম্যান হওয়ার তিন চার মাস পর থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের ওপর নির্যাতন। শিলন চেয়ারম্যান মাঝে একদিন আমার স্বামীকে ডেকে বলে মাদক ব্যবসা করতে। আমার স্বামী পুলিশ ও পরিবারের ভয়ে মাদক ব্যবসা করতে অস্বীকার হয়। শিলন চেয়ারম্যান আমার স্বামীকে বলে, তোর পরিবার জানবে না, আর যদি জেনে ফেলে আমি ম্যানেজ করে নিব। আর পুলিশ তোকে ছুঁয়েও দেখবে না। শত অযুহাত দেখিও কোনো কাজ হয় না। শিলন চেয়ারম্যান নাছড়বান্দার মতো পিছু লেগে থাকে। একপর্যায়ে আমার স্বামী রাজি হয়। দীর্ঘদিন ব্যবসা করার পর পরিবারের চাপে আমার স্বামী ব্যবসা করবে না বলে শিলনকে। মাদক ব্যবসা করতে অস্বীকার করায়, শিলন চেয়ারম্যান রেগে গালাগালি করে এবং পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেবার হুমকি দেয়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, দুইদিন পর আমার বাড়ি থেকে মাদক না পেয়েও আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। ম্যাজিস্ট্রেট এর সামনে তারা বলে আমার স্বামীর কাছ থেকে মাদক উদ্ধার করেছে। ২০২২ সালের ১১ই অক্টোবর তারিখে চার মাসের সাজা দেয়। আমার স্বামী জেলে থাকা অবস্থায় শিলন চেয়ারম্যান আমার স্বামীর সঙ্গে জেলখানায় দেখা করতে যায় এবং বলে “তুই তো আমার গোপন খবর সব জেনে ফেলেছিস, তাই তোকে ছাড়া যাবে না, তোকে ছেড়ে দিলে আমার গোপন তথ্য সবাইকে বলে দিবি। তুই জেল থেকে বের হয়ে আমার মাদক ব্যবসা আবার চালু করবি। তা না হলে আমি কী করতে পারি বুঝতে পারছিস। না হলে কিন্তু তোর বাড়ি থাকতে দেব না, আবার মাদকের আসামি করে জেলে ঢুকিয়ে দেব।” আমার স্বামী সেই ভয়ে জেল থেকে বাইরে এসে আবার শিলন চেয়ারম্যান এর মাদক ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু এই ভাবে আর কতদিন? আমার সন্তানরা বড় হয়ে যাচ্ছে তাছাড়া পরিবার থেকে চাপ দিচ্ছে। আমার স্বামী চেয়ারম্যানকে বলে আমি আর মাদক ব্যবসা করব না। মাদক ব্যবসা করতে অস্বীকার করায় শিলন চেয়ারম্যান এর পালিত গুন্ডা মো. আলীসহ তার সাথীরা আমার বাড়িতে এসে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য খোঁজ করে। আমার স্বামীকে বাড়ি না পেয়ে আমার বাড়ির বাক্সের তালা ভেঙে এক বিঘা জমি বন্ধক নেওয়ার স্ট্যাম্পসহ আমার শ্বশুরের গরু বিক্রয় করা ৮৩ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। এখন পর্যস্ত আমার বাড়ি রাতদিন চেয়ারম্যানের পালিত গুন্ডারা অত্যাচার করছে। আমার স্বামীকে হত্যা করার হুমকি দেচ্ছে।
শিলন চেয়ারম্যানের গাজা, ইয়াবা, টাপেন্ডা, ফেনসিডলসহ সকল প্রক মাদকদ্রব্য ব্যবসা আছে জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে এই দম্পতি আরও বলেন, আমরা স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে চাই। পাশাপাশি পুলিশের সহযোগিতা কমনা করছি। আমার স্বামী বলেছে, শুধু আমাকে দিয়েই নয়, আরও অনেক জনকে দিয়েই শিলন চেয়ারম্যান মাদক ব্যবসা করান।
এর আগে, গত ৮ জুলাই ওই এলাকার কামাল হোসেন নামে এক যুবলীগকর্মী একই অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেন দাবি করেন, তাকে দিয়ে জোরপূর্বক প্রায় দেড় বছর ধরে মাদক ব্যবসাসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করিয়ে আসছেন ইউপি চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান শিলন। এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতে অপারগতা প্রকাশ করায় প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন বলে জানান কামাল। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেহালা ইউপি চেয়ারম্যান মকলেচুর রহমান শিলন বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। অনৈতিকভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন