সীমান্তের শূন্য রেখায় শেষ বারের মতো বাবার মুখ দেখার সুযোগ করে দিবে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ। মৃত্যুর পর কাঁটাতারের কাছে বাবার মরদেহ নিয়ে অপেক্ষায় স্বজনরা। অপেক্ষা বাড়লেও শেষ পর্ষন্ত বাবাকে শেষ বারের মতো দেখার অনুমতি বিএসএফ এর কাছে থেকে না পাওয়ায় ভারতে বসবাসরত ছেলে ও মেয়েকে ফিরতে হয় বুকভরা কষ্ট নিয়ে।
ঘটনাটি বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টম্বর) দুপুরে মেহেরপুরের মুজিবনগর স্বাধীনতা সড়ক সীমান্তের। মুজিবনগর উপজেলার ভবের পাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন দফাদার বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। এক মেয়ে ও দুই ছেলে বিবাহ বন্ধনের কারণে ভারতের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে বসবাস করে আসছেন।
ছেলে মাইকেল দফাদার বলেছে, বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে ওপারে কাঁটাতার কাছে অপেক্ষা করতে থাকেন আমার ভাইবোন ও অন্যান্য স্বজনরা। বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে চিঠি দিলে তাদের ঊদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের অনুমতি না পাওয়ায় শেষ বারের মতো বাবার মুখ দেখতে পারলেন না সন্তানরা। বিয়ের পর ভারতে থেকে যায় মেয়ে ও দুই ছেলে। বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা তার কাটার এপারে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ভবের পাড়ায় বসবাস শুরু করে। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন দফাদার ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেন। এর পর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দুই দেশ ভাগ হলে পিতা ও সন্তানরা দুই দেশে বসবাস শুরু করেন। সীমান্তের তারকাঁটা দূরত্ব বাড়িয়ে রাখে বাবা ও ছেলে মেয়েদের মধ্যে। এর আগে বাবার জীবিত মুখটা দেখার জন্য বহু চেষ্টা করে দেখা হয়নি তাদের। মুঠোফোনে কথা বলে শান্তি খুঁজতো তারা।
১৩ সেপ্টম্বর বিকেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজ বাড়িতে বাধ্যর্কজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর খবরে শেষ বারের মতো বাবার মুখটা দেখার জন্য ভেঙে পড়েন তারকাঁটার ওপারে থাকা সন্তানরা। আত্মীয়স্বজনরা অনুরোধ করেন সীমান্তরক্ষি বাহিনী বিজিবিকে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষি বাহিনীর উচ্চমহলে চিঠি চালাচালির পর মুজিবনগর স্বাধীনতা সড়কের ১০৫ নাম্বার মেইন পিলারের কাছে শেষ বারের মতো বাবার মুখটা দেখোনোর জন্য মরদেহ নিয়ে আসা হয় শূন্যরেখায়। সেখানে ওপারে অপেক্ষায় থাকা দুই ছেলে ও মেয়ের জন্য অপেক্ষায় থেকে দুপুরে বিএসএফের পক্ষ থেকে জানানো হয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি না পাওয়ায় বাবার মরদেহ দেখানো যাচ্ছে না।
বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মাইকেল দফাদার বলেন, মৃত্যুর পর বাবার মুখটা শেষ বারের মতো দেখতে পেলে কিছুটা মনকে সান্ত্বনা দিত আমার ওপারে থাকা ভাই বোনরা। আমরা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে বিজিবিকে অনুরোধ করেছিলাম শেষ বারের মতো আমার বাবার মুখটা দেখার ব্যবস্থা করার জন্য। শেষ পর্ষন্ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অনুমতি না পাওয়ায় দেখানো হলো না। মরদেহ নিয়ে এখন দাফনের ব্যবস্থা করব।
স্থানীয় বাসিন্দা জুবের হোসেন বলেন, সীমান্ত গ্রামগুলোতে বসবাসকারীরা বলছেন এমন ঘটনা এবারই প্রথম। অনেকের আপনজন বাবা মায়ের মৃত্যুর খবর পেলেও সীমান্তের শূন্য রেখায় শেষ দেখার ব্যবস্থা করেন দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এবার তারকাঁটার কাছে গিয়েও আঁকুতি জানিয়ে চোখের জলে ফিরে এসেছে।
বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সকালে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। শেষ বারের মতো বাবার মরদেহ সীমান্তের শূন্যরেখায় দেখানোর জন্য। পরে দুপুরে বিএসএফের পক্ষ থেকে জানায় অনুমতি না মেলায় দেখানো সম্ভব হয়নি।
সাবেক ইউপি সদস্য দিলীপ মন্ডল বলেন, এখানকার বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার ভারতের হৃদয়পুর বিএসএফের সঙ্গে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন যোগাযোগ করার। ছেলে ও মেয়েকে তার বাবার মরা মুখটা দেখানোর জন্য, কিন্তু সেটা হয়নি। তবে এর আগে এখানকার একটা মেয়ে মারা গেছিল, সেটা দেখানো হয়েছিল।
মন্তব্য করুন