

মরা ঘাটের নদীর দ্বীপে একাধিক পরিবারের বসবাস। নেই তাদের চলাচলের রাস্তা। অন্যের জমির আইল দিয়ে দুশ মিটার হেঁটে উঠতে হয় প্রধান সড়কে। মাঝখানে আবার বিশাল খাল। এ খাল পারাপারে একমাত্র ভরসা ড্রামের ভেলা।
সবমিলিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই দ্বীপচরের মানুষদের। এ পরিস্থিতিতে চরের সন্তানদের সঙ্গে বিয়ে করাতে নারাজ অনেকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় ভেঙে যায় ঠিকঠাক হওয়া বিয়ে। ফলে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে অনেকটা বেগ পেতে হয় বলে জানান পুরান লক্ষ্মীপুর দ্বীপের বাসিন্দারা।
সরেজমিনে বুধবার (২৯ অক্টোবর) গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জয়েনপুর-পুরান লক্ষ্মীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এখানকার বকশীরদহর পানির ওপর দিয়ে ড্রামের ভেলায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ বেশ কিছু নারী-পুরুষ। এমন দুর্ভোগই নিত্যসঙ্গী বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
জানা গেছে, বনগ্রাম ইউনিয়নের জয়েনপুর ঘেঁষে একটি গ্রামের নাম পুরান লক্ষ্মীপুর। একসময় এর পাশ দিয়ে বয়ে যেত ঘাঘট নদী। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় সৃষ্টি হয় মরা নদীতে। এখন এটি বকশীরদহ নামে অনেকে চেনেন এবং জানেন। বকশীরদহর ওপার ঘেঁষে দ্বীপে বসবাস করেন বেশ কিছু পরিবার। তারা যুগযুগ ধরে বসবাস করে আসলেও তাদের নেই রাস্তাঘাট। সেসঙ্গে বকশীরদহর পানির ওপর দিয়ে চলাচল ছাড়া নেই কোনো বিকল্প রাস্তা। নিত্যদিন ড্রামের ভেলা দিয়ে চলতে হয় বিভিন্ন স্থানে। এই ভেলায় ওপারে পৌঁছে হেঁটে যেতে হয় জমির আইল দিয়ে। এতে করে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শত শত মানুষ।
সৈয়দ আলী নামের এক ভুক্তভোগী জানান, শুধু সেতুও নয়, নেই রাস্তাঘাট। ভেলায় ওপারে পৌঁছে অন্যের জমির আইল দিয়ে খানিকটা হেঁটে গিয়ে মূল সড়কে উঠতে হয়। এ পাশে সেতুসহ একটি রাস্তা নির্মাণের দাবি করেন তিনি।
দ্বীপচরের রবিউল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য প্রয়োজনী তাগিদে যাওয়ার জন্য ড্রামের ভেলাই ভরসা। একটি সেতু ও রাস্তার জন্য দীর্ঘযুগের ভোগান্তি। জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে কোনো সুফল হয়নি। এমন পরিস্থিতি থাকায় এই দ্বীপের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে করাতে অনেকটা বেগ পেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে ঠিকঠাক হওয়া বিয়ে ভেঙে যায়।
বর্ষা মৌসুমে খাল পারপারে নিজেদের টাকায় বানানো হয় বাঁশের সাঁকো বা ড্রামের ভেলা। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। এই বকশীর দহর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানানো হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান শরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।
জয়েনপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, বকশীর দহর ওপারে শতাধিক হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। সেখানে শাক-সবজি-ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। ওইসব ফসল এপারে নিয়ে আসা খুবই কষ্টসাধ্য। এতে করে কখনো কখনো উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এই বকশীর দহর ওপস সেতু নির্মাণ জরুরি।
বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফজলুল কাইয়ুম হুদা বলেন, ওইস্থানে দুর্ভোগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
মন্তব্য করুন