

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বগুড়ার ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুদিনের বৃষ্টিতে কৃষি আবাদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ করে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতভর ভারি বৃষ্টিতে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
মাঠের ধান, ভুট্টা, ধান, আলুসহ শীতকালীন রবি শস্যের ক্ষেত জলমগ্ন হয়ে পড়ায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। টানা বৃষ্টিতে এমন অপ্রত্যাশিত ক্ষতি হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা চরম হতাশায় ভুগছেন।
শনিবার (০১ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বগুড়া সদর উপজেলা, শিবগঞ্জ, শেরপুর, ধুনট, শাজাহানপুর এলাকার নিচু কৃষিজমি। নিবিড় চাষাবাদের জন্য পরিচিত এই অঞ্চলগুলোতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট এই টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। তবে তাদের ধারণা, কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস উচ্চ পর্যববেক্ষক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বগুড়ায় ৯৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এর আগে বুধবারে ১২ মিলিমিটারে এবং বৃহস্পতিবারে ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এই বৃষ্টি আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরপুরে উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমির ধান নুয়ে পড়েছে। ফসলের ক্ষতির হিসাব নিরূপণের কাজ চলছে।
শেরপুরের খানপুর, মির্জাপুর ও সুঘাট এলাকার ভুট্টা চাষি সোলাইমান, বাদশা, জানিয়েছেন, জমিতে ভুট্টা গাছ পরিপুষ্ট হওয়ার পথে ছিল, কিন্তু আকস্মিক বৃষ্টিতে গাছগুলো গোড়া নরম হয়ে মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এতে ফলন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাবে এবং অনেক ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আব্দুল হালিম, খোকন, মামুন ও ফরিদুল ইসলাম জানান, ধান চাষে এমনিতেই লোকসান, তারপর ধান পোক্ত হয়েছে এর মধ্যে পড়ে গেলো। ফলন ১০০% কমে যাবে। এতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি। আগাম শীতকালীন সবজির খেতও পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
কুসুম্বি ইউনিয়নের কৃষক ওমর ফারুক ও শফিকুল ইসলাম করে বলেন, টানা বৃষ্টির পর শুক্রবার রাতে যে বৃষ্টি হলো, আগাম আলুর খেতগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। তাতে আর কিছু বাকি রইল না। আমার সবজি আর আলুর খেত এখন পুকুর। রোপণ করা আলুবীজ নষ্ট হবে। এ ছাড়াও মরিচ গাছগুলোর ক্ষতি হয়েছে। সরকারি সাহায্য ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার কালবেলাকে বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে নিচু জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত ধান, ভুট্টা, আলু ও সবজি খেতের ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের দ্রুত জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পরামর্শ দিচ্ছি এবং ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সহায়তার আওতায় আনার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ধুনটে কুশি ভরা ধানের ফুল ঝড়ো বাতাসে পড়ে যাওয়ায় পরাগায়ন না হলে চিটা হয়ে যেতে পারে। অসময়ে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গভীর উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা।
শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক বজলুর রহমান বলেন, তিনি রসুন বপনের জমি তৈরি করেছিলেন। সকালে গিয়ে দেখেন ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এখন কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
দেবীপুর গ্রামের কৃষক রহমত মিয়া বলেন, রাতের বৃষ্টিতে তাঁর জমির ফুলকপি ক্ষেতে পানি জমেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষতি হবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল রহমান কালবেলাকে বলেন, কার্তিকের এই বৃষ্টি কৃষির জন্য লাভের চেয়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে। এখন আমন ধান পাকার মৌসুম, অনেক কৃষক ধান কাটা শুরু করেছেন। আবার রবিশস্যের জন্য জমি প্রস্তুতের কাজও চলছিল। বৃষ্টির কারণে এসব কাজ অন্তত দুই-তিন দিন পিছিয়ে যাবে। তবে এখনই বৃষ্টি থেমে দ্রুত রোদ উঠলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
মন্তব্য করুন