রেজওয়ান রনি, রংপুর
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কালবেলার হাতে কলরেকর্ড, সেই খণ্ডিত মরদেহ নিয়ে বেরিয়ে এলো নতুন তথ্য 

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহের সামনে দুটি প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের ২৬ টুকরা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার পরিবারের লোকজন বাল্যবন্ধু জরেজকে সন্দেহ করলেও তিনি দাবি করেছেন, ঢাকায় যাওয়ার পর তাকে বাসায় রেখে বেরিয়ে যান আশরাফুল। পরে ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। পরে একজন অপরিচিত ব্যক্তি তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আশরাফুলের মোবাইল তাকে দিয়ে চলে যায়।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে আশরাফুল হকের ছোট বোন রাহেনা খাতুনের সঙ্গে মোবাইলে জরেজের ৭ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের কথোপকথন হয়। সেই ফোনালাপের রেকর্ড কালবেলার হাতে এসেছে।

ফোনে কথা বলার সময় জরেজ রাহেনাকে জানান, তিনি সায়দাবাদে বাসের টিকিট কাটছেন এবং বাড়ি ফিরছেন; বাড়িতে গিয়ে কথা বলবেন বলেও আশ্বস্ত করেন। তবে ওই কথোপকথনের পর থেকেই তিনি মোবাইল বন্ধ করে রাখেন।

রাহেনার স্বামী মনোয়ার হোসেনও নিশ্চিত করেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার স্ত্রীর সঙ্গে জরেজের কথা হয়েছিল। কথোপকথনের শুরুতে আশরাফুল হকের ছোট বোন রাহেনা ফোনে জরেজকে বলেন, ‘এ ভাই আমার ভাইওক ধরি আইসো ভাই, কোটে আছে ধরি আইসো ভাই।’

এসময় জরেজ উত্তর দেন, ‘অয় (আশরাফুল) আমাক যেখানে রাখি গেছিল সেখানে ছিলাম। সেখানে ওই বাসায় ওই রুমে ছিলাম। একজন আসি আমার ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করতেছে, তুমি আশরাফুলকে চেনো, তখন বললাম হ্যাঁ আমি চিনি। তখন বলল আসো, তখন জিজ্ঞেস করলাম আশরাফুল কোথায়? তখন বলল আচ্ছা আসো, গাবতলীতে আসো। গেলাম গিয়ে প্রথমে আমাকে চেক করছে। আমার কাছে টাকা-পয়সা আছে কি নাই সেটা চেক করছে। আশরাফুল আছে কোথায় সেটা দেখাইলো না। আশরাফুলের সঙ্গে আমার কথাও বলা হইল না, শুধু আশরাফুলের ফোনটা আমার কাছে দিল। ওরা দেখিয়ে দিছে ফোনটা কোথায়, ওরা পাশে থেকে ফোন দিছে সেটাও না। বলছে যে চাম্পার টঙ আছে ওই টঙটাতে গিয়ে দেখেন। ওখান থেকে আমি নিয়ে (মোবাইল) আইলাম।’

এ সময়ের রাহেনা জিজ্ঞেস করেন, কোন জায়গায় আছেন ভাই। তখন পাশের একজনের কাছে শুনে জরেজ জানান, সায়েদাবাদ আছেন।

রাহেনা আবার জিজ্ঞেস করেন বাসে আছেন? তখন জরেজ বলেন, বাসে এখনো উঠি নাই টিকিট কাটছি।

তখন রাহেনা তাকে জিজ্ঞেস করেন, যে লোকটা আপনাকে মোবাইলটা দিলো সে লোকটাকে আপনি চেনেন না? তখন জরেজ বলেন, ওই লোক আশরাফুলের কথা বলল এজন্য আমি কিন্তু তার সঙ্গে গেছি। মানে কোনো প্রবলেম বা বিপদ হইছে নাকি। রাহেনা বলেন, হ্যাঁ ভাই। কিন্তু আপনি ওই জায়গায় আছেন ও (অপরিচিত লোক) ফির কীভাবে জানল? আশরাফুল যদি তাদের কাছে জিম্মি হয়, আশরাফুল যদি না বলে ওই লোক কি আমাক খুঁজি পাবে আমি কোথায় আছি?

রাহেনা প্রশ্ন করেন, উনি যে ফোনটা দিলো ভাই তা আপনি কিছু বলেন নাই ভাই যে যায় ফোন...

এসময় জরেজ বলেন, আমাকে ফোনও দেয় নাই। উনি সরাসরি আমার গেটে আসি ডাক দিছে। আমি তো আশরাফুলকে ফোন দিতে দিতে পাগল, আমি তো ওকে পাইতেছি না। আমি খাব কি, কি করমু আমি, নিজে দিশা পাইতেছি না। আমি তো তার কাজ করি বোঝেন নাই। এখন যখন আশরাফুলের কথা বলল, তখন আমি বের হয়ে এলাম। যে আশরাফুলকে আপনি চেনেন? হ্যাঁ আমি চিনি আশরাফুল আমার ভাই হয়। তখন ও বলতেছে আপনি আসেন, আমাকে নিয়ে গেল। নিয়ে যায়া তার সঙ্গে যদি তার শত্রুতা হইবে তাহলে আমি কি তোমাকে বলতাম যে সেটটা (মোবাইল ফোন) আমার কাছে দিল। আমার কি কথাটা বলা দোষ। লেংটাকাল থেকে একসঙ্গে ঘুরি আমরা।

তখন রাহেনা বলেন, ঘোরেন তো ঠিক আছে ভাই। একসঙ্গে তো গেছেন এটাই সমস্যা। একসঙ্গে গেছেন। কিন্তু দুইজনের একজন আইসেন, আর একজন কোথায় গেছে জানাজানি নাই। এটা কেমন কথা। আচ্ছা ভাই ঠিক আছে।

জরেজ বলেন, আচ্ছা বাসায় যাই, বাসায় গিয়ে কথা বলব।

নিহত আশরাফুল হক রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুর রশীদের ছেলে। তিনি পেঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করতেন। স্ত্রী, দুই সন্তান ও বাবা-মা নিয়ে তার সুখী পরিবার ছিল।

স্থানীয়রা জানান, বাল্যবন্ধু জরেজের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আশরাফুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিন-চার বছর আগে জরেজ মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমালেও মাসখানেক আগে দেশে ফিরে এসে আবার তার সঙ্গে চলাফেরা শুরু করেন। জরেজ জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন এবং এজন্য আশরাফুলের কাছে টাকা চেয়েছিলেন। আশরাফুলও তাকে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

গত ৮ নভেম্বর আশরাফুলের বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে তাকে দেখে জরেজকে নিয়ে ঢাকায় রওনা দেন।

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযোগের তীর তার বন্ধু জরেজের দিকে তুলেছেন আশরাফুলের মা এছরা খাতুন।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নিহতের বাড়িতে আশরাফুল হকের মা এছরা খাতুন বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘মোর ব্যাটাক জরেজ খায়া ফেলাইলো। মোর ব্যাটাক অয় নিয়ে গেছে। টাকা আনার জন্য জরেজ মোর ব্যাটাক নিয়ে গেছে।’

আশরাফুলের বাবা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘জরেজ বলছিল জাপান যেতে অনেক টাকা লাগবে। এজন্য আশরাফুল আমাকে টাকা দিতে চেয়েছিল।’

বুধবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আশরাফুলের স্ত্রী লাকী বেগম বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। প্রতিবারই ফোন বেজে কেটে যায়। সন্দেহ হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি জরেজের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী বলেন, ‘টেনশন করিও না, দুইজন তো একসঙ্গে আছে।’

পরে আশরাফুলের নম্বরে ফোন দিলে জরেজ রিসিভ করে জানান, আশরাফুল তাকে বাসায় রেখে বাইরে গেছে। তিনিও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

বদরগঞ্জ থানার ওসি একেএম আতিকুর রহমান বলেন, ‘নিহতের পরিবারের সদস্যদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য রমনা জোনের ডিসি ও শাহবাগ থানার ওসিকে পাঠানো হয়েছে। নিহতের বড় বোন ঢাকায় থাকেন। এ ছাড়া তার স্ত্রীর ভাই ঢাকায় যাবেন। দুজনের যে কেউ মামলা করতে পারেন।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রশাসনিক জটিলতায় স্থগিত জেমস-আলী আজমতের কনসার্ট

নুরাল পাগলের দরবারে হামলা : ২ মাস পর পরিবারের মামলা

আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে জয় বাংলাদেশের

দিল্লিতে আত্মঘাতী হামলা, গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো অভিযুক্তের বাড়ি

সন্তানের গায়ের রঙ ‘ভিন্ন’ হওয়ায় স্ত্রীকে তালাক

শীতের সবজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

১৯ নভেম্বর সকাল পর্যন্ত আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল অধিদপ্তর

বিপিএল: চমক দেখাল ঢাকা ক্যাপিটালস

১০

মোটরসাইকেলে এসে দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপে আগুন

১১

রচনার বিদায়, এবার দিদিদের সামলাবেন মীর

১২

পদ ফিরে পেলেন বিএনপি-যুবদলের ৩ নেতা

১৩

কালবেলার হাতে কলরেকর্ড, সেই খণ্ডিত মরদেহ নিয়ে বেরিয়ে এলো নতুন তথ্য 

১৪

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশ / ডাস্টার দিয়ে ছাত্রীর মাথা ফাটানো সেই প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত 

১৫

ফেসবুক মনিটাইজেশন হারানো এড়ানোর সহজ কিছু টিপস

১৬

১০৩ রানে পিছিয়ে আয়ারল্যান্ড, বাংলাদেশের দরকার ৩ উইকেট

১৭

দিল্লি সফরে যাচ্ছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

১৮

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় বাড়াল এনসিপি

১৯

পিপলস চয়েসে শীর্ষে মিথিলা

২০
X