

নাটোরের সিংড়া উপজেলার নুরপুর গ্রামে নতুন এক সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দিয়েছে বেলজিয়াম জাতের হাঁস পালন। এই জাতের হাঁসের প্রতিটির ওজন হয় গড়ে ৪ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত। স্বাদ ও পুষ্টিগুণে অনন্য এই হাঁসের ডিম ও মাংসের বাজারে এখন ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। আর এই হাঁস পালন করেই সিংড়ার দুই যুবক গড়ে তুলেছেন চলনবিল হ্যাচারি সিংড়া নামে সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সিংড়া উপজেলার নুরপুর গ্রামের তরুণ খামারি জাহিদ মাহমুদ কয়েক বছর আগেও ছিলেন ঋণগ্রস্ত। জীবনের নানা সংকটে জর্জরিত অবস্থায় একসময় তার মাথায় আসে হাঁস পালনের চিন্তা। সে ভাবনাটিই তার জীবনে ঘুরে দেয় সফলতার চাকা।
খামারি জাহিদ মাহমুদ জানান, তখন আমার প্রায় ৮ লাখ টাকার ঋণ ছিল। একদিন প্রবাসী দুলাভাই হাসান আলীর সঙ্গে কথা বলি। তিনি উৎসাহ দেন এবং তিনি টাকা দিয়ে ১০০টি বেলজিয়াম হাঁস কিনে দেন। সেখান থেকেই শুরু।
তিনি বলেন, আমরা এখন প্রতি মাসে দুই লাখ টাকার বেশি আয় করি। ডিম, বাচ্চা ও হাঁস বিক্রি করেই এ আয় হয়। আমি হাঁস পালন করে সব ঋণ শোধ করেছি, এখন নিজেই অনেকের কর্মসংস্থান তৈরি করেছি।
জানা গেছে, চার বছর আগের সেই ছোট্ট উদ্যোগ এখন পরিণত হয়েছে বিশাল বাণিজ্যিক খামারে। বর্তমানে তাদের খামারে হাঁসের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৫০০টি। হাঁসের পাশাপাশি এখন তারা বাচ্চা উৎপাদনও শুরু করেছেন। বছরে তাদের মোট আয় ২৪ লাখ টাকারও বেশি।
এ খামারে প্রতিটি হাঁস ৪৫ দিনের মধ্যেই ৩ কেজি ওজনের হয়। ফলে স্বল্প সময়েই বিক্রয়যোগ্য হয়ে ওঠে। তারা জানায়, একটি হাঁসের ডিমের দাম ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত, আর একটি বাচ্চা বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়। খামারটিতে এখন কাজ করছেন ৪ জন স্থানীয় যুবকও। এতে শুধু জাহিদ ও হাসান নন, আশপাশের অনেক বেকার তরুণও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন হাঁস পালনে।
খামারি হাসান বলেন, স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে বেলজিয়াম জাতের হাঁস পালন শুরু করা যায়। নিয়মিত যত্ন, সঠিক খাবার ও ভ্যাকসিন প্রয়োগে ভালো ফল পাওয়া যায়। হাঁসগুলো দ্রুত বেড়ে ওঠে, ফলে খুব অল্প সময়েই লাভ পাওয়া সম্ভব।
জাহিদ বলেন, একসময় মানুষ বলত হাঁস পালনে ভবিষ্যৎ নেই, এখন তারা নিজেরাই জানতে আসে হাঁস পালন কেমন লাভজনক ব্যাবসা। আমরা চাই, আরও তরুণ এগিয়ে আসুক এই খাতে। আমরা প্রথমে ভাবিনি এত দ্রুত উন্নতি হবে। কিন্তু হাঁসের ডিম ও মাংসের চাহিদা এখন অনেক। অনেকেই আমাদের কাছ থেকে হাঁসের জাত সংগ্রহ করে পালন শুরু করেছেন।
সিংড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, সিংড়ায় নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে, যাতে হাঁস পালনে আগ্রহীরা আরও উৎসাহিত হন।
এ বিষয়ে সিংড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. তাশরিফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের আমরা সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। হাঁস পালনের জন্য প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল সহায়তা, পরামর্শ ও ভ্যাকসিন আমরা বিনামূল্যে প্রদান করি। উপজেলায় বর্তমানে বেলজিয়াম জাতের একটি বড় খামার রয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।
প্রসঙ্গত, উদ্যোক্তা জাহিদ এবং হাসান এখন শুধু সফল খামারি নন, তারা হয়ে উঠেছেন এলাকার অনুপ্রেরণার প্রতীক। তাদের সফলতা দেখে অনেক তরুণ হাঁস পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
মন্তব্য করুন