

পাবনার ঈশ্বরদীতে ৮টি সদ্যোজাত কুকুরছানাকে পুকুরে ফেলে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত নারীর স্বামীকে তার বরাদ্দকৃত সরকারি বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দিয়ে ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নকে তার কোয়াটার থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাসানুর রহমান নয়ন অভিযুক্ত নিশি বেগমের স্বামী। তারা ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরের আবাসিক এলাকায় কোয়াটারে বসবাস করতেন। এর আগে রোববার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরের আবাসিক এলাকার পুকুরে কুকুরছানাগুলোকে ফেলে দেওয়া হয়।
এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শহরজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বইছে তীব্র সমালোচনা। সেই সঙ্গে জড়িতকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করেছেন মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর বলেন, সম্প্রতি মা কুকুরটি ৮টি ছানা প্রসব করে। রোববার সন্ধ্যার পর ছানাগুলোকে দেখতে না পেয়ে মা কুকুরটি বিকটভাবে ডাকাডাকি করে। সারা রাত মা কুকুরটি অফিসার্স ক্লাব এবং আবাসিক এলাকার বিভিন্ন বাসার দরজায় দরজায় ঘুরতে থাকে। এ সময় খাবার দিলেও কোনো কিছুতে মুখ দেয়নি। আমরাও বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও সন্ধান পাইনি।
তিনি আরও বলেন, সোমবার সকালে ইউএনও স্যারের আবাসিক ভবনের সামনে দিয়ে ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় তাকে কুকুরছানার বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ সময় তার ছোট ছেলে বলে ওঠে, আম্মু কুকুরের বাচ্চাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে। পরে পুকুরে গিয়ে দেখি মুখ বাঁধা বস্তা ভাসছে। তুলে এনে বস্তার মুখ খুলে দেখি ছানাগুলো মরে গেছে।
কুকুরছানা হত্যাকারী অভিযুক্ত নিশি বেগম বলেন, বাচ্চাগুলো এবং কুকুরটি আমার বাসার সিঁড়ির পাশে থাকত। বাচ্চাগুলো আমাদের খুবই ডিস্টার্ব করত, তাই আমি বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরের পাশে একটি গাছের পাশে রেখে আসি। এরপর হয়তো কোনোভাবে পুকুরের মধ্যে পড়ে যায়। আমি নিজে বাচ্চাগুলোকে পুকুরে ফেলে দিইনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, এটা খুবই অমানবিক। মা কুকুর ইতোমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে আমাদের লোকজন চিকিৎসা দিয়েছে। প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯ এর অধীনে কুকুরছানা হত্যার অপরাধে মামলার একটি বিধান রয়েছে। কুকুরছানা হত্যাকারী নিশি বেগমের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। মামলা করারও সিদ্ধান্ত নিতে পারি।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এটি চরম অমানবিক ও নিষ্ঠুর কাজ। শাস্তিস্বরূপ ওই কর্মকর্তাকে এক দিনের মধ্যে সরকারি কোয়ার্টার ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মা কুকুরটির চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন