

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলারাড়ী ইউনিয়নের ঝাড়িরঝার এলাকায় রত্নাই নদীর ওপর নিজ অর্থায়নে এবং নিজেরাই শ্রম দিয়ে কাঠের সেতু নির্মাণ করেছে যুবদলের নেতাকর্মীরা। এতে সেতুর দুই পাশের তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীসহ দুই ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষের যাতায়াতে স্বস্তি ফিরেছে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে সেতুটি উদ্বোধন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
স্থানীয়রা জানান, ওই রত্নাই নদীর পশ্চিম পাশে জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়ন এবং পূর্ব পাশে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন ও ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের একাংশের মানুষের বসবাস। নদীর ওপারে একটি প্রাথমিক ও একটি উচ্চ বিদ্যালয় এবং অপর পাশে আরও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১০ হাজার মানুষ নৌকা দিয়ে নদী পাড় হতো। দেশ স্বাধীনের পর থেকে নদীটি দুই ইউনিয়নের মানুষকে বিভক্ত করে রেখেছিল। উৎপাদিত ফসল নিয়ে নদী পার হওয়া ছিল কৃষকদের বিড়ম্বনা। তাদের নৌকাই ছিল একমাত্র ভরসা। জনসাধারণের ভোগান্তির বিষয়টি অনুধাবন করে নিজেরাই শ্রম দিয়ে দুই লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে ওই নদীর ওপর ৭৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫ ফুট প্রস্থ একটি সেতু নির্মাণ করেন যুবদলের নেতাকর্মীরা।
জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনিছুর রহমান আনিছ ও সদস্য সচিব হাসান আলীর নেতৃত্বে স্থানীয় বিএনপি নেতা ইউপি সদস্য আব্দুল করিম এবং ভেলাবাড়ী ইউনিয়ন যুবদলের নেতাকর্মীরা নিজেরাই অর্থ ও শ্রম দিয়ে ওই দৃষ্টিনন্দন সেতুটি নির্মাণ করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরফিনা জানায়, এখন সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় তাদের প্রতিদিনের পথচলা অনেক সহজ হলো। সেতুটি হওয়ার কারণে প্রতিদিন ক্লাসে যেতে আর ঝুঁকি নিয়ে নৌকা পার হতে হবে না। পড়ে গিয়ে বই-খাতাও আর ভিজে যাবে না। তারা এখন সহজেই স্কুলে যেতে পারবে।
কৃষক যব্বার আলী জানান, শুধু শিক্ষার্থী নয়, এই সেতু স্থানীয় কৃষক, শ্রমজীবী এবং সাধারণ মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে স্বস্তি। হাটবাজার, ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা শহরে যাতায়াতের পথ কয়েক কিলোমিটার কমে যাওয়ায় সময় ও যাতায়াত ব্যয় দুটিই কমবে। অস্থায়ী হলেও এ সেতুটি তাদের দীর্ঘদিনের যোগাযোগে দুর্ভোগ লাঘব করেছে। স্থানীয়ভাবে এ ধরনের উদ্যোগ তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।
স্কুলশিক্ষক আব্দুল করিম মিয়া জানান, সেতুটির সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে ঝাড়ীরঝার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিষতুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মহিষতুলি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আগে এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থীকে নৌকায় নদী পার হতো। ফলে বাড়তি খরচ, সময় নষ্ট এবং নিরাপত্তাহীনতা ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। বর্ষায় নদীর পানি বেড়ে গেলে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যেত।
মন্তব্য করুন