

দীর্ঘ ১৩ মাস ভারতে কারাভোগের পর স্বামীকে কাছে পেয়ে কান্না থামাতে পারছেন না স্ত্রী আজেদা বেগম। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতের জেলে আটক ছিলেন তার স্বামী বকুল ইসলাম।
স্বামীকে কাছে পেয়ে আজেদা বলেন, প্রায় এক বছর ধরে আমরা প্রতিদিন পথের ধারে বসে চেয়ে থাকতাম কখন ফিরে আসবে আমার স্বামী। রাতে ঘুম হতো না, দিন চলত না। একটা করে দিন আমার কাছে মনে হতো একটা বছর। আজ যখন তাকে নিরাপদে দেখছি, চোখের জল আমার থামছে না। আল্লাহকে ধন্যবাদ, আমাদের প্রার্থনা সাড়া দিয়েছেন।
শুধু বকুল ইসলাম নয়, ভারতের কারাগারে বন্দি ছিলেন কুড়িগ্রামের চিলমারী ও রৌমারীর ৬ জেলে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আইনি প্রক্রিয়া শেষে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে নিজ দেশে ফেরেন তারা।
কারাভোগী জেলেরা হলেন— চিলমারী উপজেলার ৪নং রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদের হরিণের বন্দ এলাকার মো. রাসেল মিয়া (৩৫), ব্যাপারী পাড়া এলাকার বিপ্লব মিয়া (৪৫), মো. মীর জাহান আলী (৪৫), বকুল মিয়া (৩২), মো. আমের আলী (৩৫) ও রৌমারী উপজেলার বকবাদা এলাকার মো. চাঁন মিয়া (৬০)।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সীমান্তঘেঁষা জিঞ্জিরাম নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ভুলবশত ভারতের জলসীমায় ঢুকে পড়েন জেলেরা। সে সময় সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা ভারতীয় বিএসএফ তাদের আটক করে এবং আদালতের নির্দেশনায় মেঘালয় আমপাতি জেলার মাহিন্দগঞ্জের ক্ষণস্থায়ী কেন্দ্রে রাখা হয়। এনিয়ে চিলমারী সাংবাদিক ফোরামসহ স্থানীয়রা ও স্বজনরা জেলেদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন।
রমনা ব্যাপারী পাড়ার মীর জাহানের স্ত্রী মোছা. ববিতা বেগম বলেন, আমার স্বামীর খোঁজ না পেলে আমরা বাঁচার আশা হারিয়ে ফেলতাম। একেক দিন যেন একেকটি অশান্তির সাগর পেরিয়ে যাচ্ছিলাম। আজ সে ফিরে এসেছে, সব কষ্ট যেন এক মুহূর্তেই দূর হয়ে গেল। স্বজনের কাছে ফিরে আসা এই আনন্দ কখনো ভুলব না।
চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম আঁশেক আঁকা বলেন, কারাগারে থাকাকালীন তাদের পরিবারকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করেছি। তারা যেহেতু দেশে ফিরেছেন ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু পারি সহযোগিতা করবো।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক কালবেলাকে জানান, জেলেরা আটকের পর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অবগত করা হয়। দীর্ঘ ১৩ মাস পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া গতকাল রমনা ঘাটে আমি নিজেই তাদের রিসিভ করছি। এ সময় তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের যে সমস্যাগুলো আমরা দেখব। আমাদের জায়গা থেকে যতটুকু পারি দেখব, সমস্যা নেই।
মন্তব্য করুন