

বাংলাদেশ স্কাউটস, চট্টগ্রাম জেলা রোভারের উদ্যোগে আগামী ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৫ দিনব্যাপী ১৯তম চট্টগ্রাম জেলা রোভার মুট।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে নগরের চট্টগ্রাম কলেজের জেলা রোভার স্কাউট কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে রোভার মুটের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কর্মপরিকল্পনা ও আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ১৯তম জেলা রোভার মুটের আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. ফজলুল কাদের চৌধুরী।
তিনি বলেন, মহান বিজয়ের মাসে এই আয়োজন শুধু একটি স্কাউটিং ক্যাম্প নয়; বরং এটি তারুণ্যের শক্তি, দেশপ্রেম ও মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হওয়ার এক অনন্য মিলনমেলা। তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাতবরণকারী রোভার স্কাউটদের, বিশেষ করে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, শহীদ আবু সাইজিদ, শহীদ ওয়াসিম, শহীদ ফরহাদ, শহীদ শান্ত ও শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়াকে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী জেলার প্রায় ৮০টি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা থেকে এক হাজারেরও বেশি রোভার স্কাউট, কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবক এ মুটে অংশ নেবেন। পুরো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে পাঁচ দিন ধরে রোভারদের পদচারণায় মুখর থাকবে পরিবেশ। রোভার মুট মূলত রোভার স্কাউটদের মিলনমেলা, যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিত্তিক রোভার ও গার্ল-ইন-রোভার সদস্যরা পারস্পরিক সহমর্মিতা, সৌহার্দ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের নেতৃত্বগুণ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা বিকাশের সুযোগ পাবেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, স্কাউটিং একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষামূলক আন্দোলন, যার মূল লক্ষ্য শিশু, কিশোর ও যুব সমাজকে শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও সামাজিকভাবে উন্নত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। রোভার মুটের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পায়, দলগতভাবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি হয় এবং সীমিত সম্পদের মধ্যেও টিকে থাকার কৌশল রপ্ত করতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের বাইরে এসে প্রকৃতির সান্নিধ্যে অবস্থানের মাধ্যমে তারা বাস্তব জীবনমুখী দক্ষতা অর্জন করবে, যা ভবিষ্যতে বৈষম্যহীন ও মানবিক বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এবারের রোভার মুটের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—‘দক্ষতার দীক্ষা নিয়ে, রোভার চলে নির্ভয়ে’। এই থিমকে সামনে রেখে মুটের প্রতিটি কার্যক্রম সাজানো হয়েছে। মুট চলাকালে বিভিন্ন সাব-ক্যাম্পভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে, যেখানে নেতৃত্ব বিকাশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মানবিক কার্যক্রম, ক্যারিয়ার গাইডলাইন, উদ্ভাবনী চিন্তা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক নানা আয়োজন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, কাওয়ালি, পুঁথিপাঠ, কবিগান ও গণ-জাগরণী সন্ধ্যা, উডব্যাজ রি-ইউনিয়ন ও লিডার্স নাইট, টপ অ্যাচিভার্স সংবর্ধনা, সিনিয়র রোভার মেট ও প্রাক্তন রোভারদের পুনর্মিলনী এবং ভলান্টিয়ার্স নাইটসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, রোভার মুট কেবল ক্যাম্পিং বা বিনোদনমূলক আয়োজন নয়; এটি তরুণ সমাজকে নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, আত্মনির্ভরতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতায় উদ্বুদ্ধ করার একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে রোভার স্কাউটরা ভবিষ্যতে দেশ ও সমাজের বিভিন্ন সংকটে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এগিয়ে আসবে এবং মানবিক বাংলাদেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ নঈম হাসান উদ্দিন তিবরিজী, মোহাম্মদ খালেদুর রহমান, এস এম আফজর রহমান এলটি, রাশেদা আক্তার, এ জেড এম বোরহান উদ্দিন এএলটি, মোহাম্মদ ওমর ফারুক, ফরিদুল ইসলাম আলম এবং মো. মুজাহিদুল ইসলামসহ জেলা রোভার স্কাউটসের নেতৃবৃন্দ।
মন্তব্য করুন