‘ঝালমুড়ি বিক্রি করেই লাখপতি শরীয়তপুরের শাহেব আলী’- শিরোনাম দেখেই বিস্মিত হলেন? হওয়ারই কথা! মসলার ঝোল, মুড়ি, শিমের বিচি, চানাচুর, বুট, ধনিয়া পাতা, মরিচ, শসা, বিট লবণ, মসলা, জিরার মতো কিছু ঝাল প্রকৃতির খাদ্য উপাদান দিয়ে তিনি ঝালমুড়ির চমৎকার রেসিপি তৈরি করেন।
বলছিলাম শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার গোডাউন মোড় বাজারের ভ্রাম্যমাণ ঝালমুড়ি বিক্রেতা শাহেব আলি ভাইয়ের কথা। নিজের নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটা কবে যোগ হলো, এর ঠিক হিসাব মেলানো কঠিন। এখন সবার প্রিয় শাহেব আলী ভাই তিনি। নিজের ভ্রাম্যমাণ এ প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন ‘শাহেব আলী ভাইয়ের ঝালমুড়ি’।
শাহেব আলী জানান, মাত্র ৪০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন এই ব্যবসা। যা এখন ১০ বছরে পা রেখেছে। মজার ব্যাপার হলো, ঝালমুড়ির ব্যবসা এতই জমজমাট যে, তিনি ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খান। উৎসবের দিনগুলোতে প্রচুর চাপ বেড়ে যায় তার।
দুপুরের সূর্যটা যখন পশ্চিম আকাশে নামতে থাকে, তখন তিনি ঝালমুড়ি তৈরির সামগ্রী নিয়ে চলে আসেন জাজিরা গোডাউন মোড়ে। এই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টটাই তার ঝালমুড়ি নিয়ে বিচরণ।
তবে তার ১০ বছরের পথচলা অতটা সহজ ছিল না। এ ব্যবসা ধরে রাখতে বহু লড়াই করতে হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে তার অনেক সমস্যা হয়েছিল। তবুও শাহেব আলী ভাই দমে যাননি। ধৈর্য হারাননি। যার ফল হিসেবে তিনি সংসারের ভার কাঁধে রাখতে পেরেছেন।
শাহেব আলি ভাই স্ত্রী সংসার নিয়ে এখন বেশ সুখেই আছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ আমার ঝালমুড়ির ভীষণ ভক্ত। খুবই প্রশংসা করে তারা। কারও যদি ঝালমুড়ি খেতে ইচ্ছা হয়, তাহলে বলে দেয়- ওই যে শাহেব আলী ভাইয়ের ঝালমুড়ি আনবা। কারণ আমার ঝালমুড়ির ভিন্ন স্বাদ আছে। একটু খেয়ে বিচার করতে পারেন। যে খাইবে ঝালমুড়ি, তার ক্ষিধা হবে। পেট ভইরা ভাত খাইতে পারব। খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর বোঝা যাবে, শাহেব আলী ভাইয়ের ঝালমুড়ির মানে কী।
শাহেব আলী ভাইয়ের কথাগুলোর সঙ্গে পাশ থেকে সায় দিচ্ছেন তার কাস্টমার মোক্তার মাদবর, নূর হোসেন, বিপ্লব, সজিব। তাদের মুখ থেকেও একই কথা শোনা গেল। তারা বলছিলেন, ‘আমরা শাহেব আলী ভাইয়ের নিয়মিত কাস্টমার। এখানেই ব্যবসা করি। এ জন্য ঝালমুড়ি খেতে মন চাইলে শাহেব আলী ভাইয়ের কাছেই হাজির হই। এ ঝালমুড়ি না খাইলে যেন কেমন কেমন লাগে।
ঝালমুড়িতে ভিন্ন স্বাদের কারণ কী? জানতে চাইলে শাহেব আলী ভাই বলেন, ‘আমি প্রতিনিদিনের বাজার প্রতিদিন করি। কোনো মসলা বাদ রাখি না। এসব মসলা বাড়িতে রান্না করে ঝোল বানাই। আর বিট লবণ, বুট, ঘুন্নি, চানাচুর তো থাকেই। এখানে মসলার গুরুত্ব অনেক। সবকিছু দিয়ে চমৎকার এবং বেশ স্বাদের ঝালমুড়ি বানাইতে পারি।
কাজ করতে কোনো সমস্যা আছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না, আমার কাজ করতে কোনো সমস্যা নাই। কারণ সবাই আমাকে ভালো জানে। সবার সাথে হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করি। সবাইও আমার ঝালমুড়ি খাইতে আসে।
ইনকাম কেমন হয়? এর জবাবে তিনি বলেন, আমার প্রতিদিন খুব ভালো বেচাকেনা হয়। এমন সময় আসে আমি লোক সামলাইতে হিমশিম খাই । সেই হিসেবে আমার প্রতিমাসে ৬৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা ইনকাম হয়।
গোডাউন মোড় বাজারের দোকানি নুর হোসেন মাদবর বলেন, বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকান করে যত টাকা ইনকাম করে, আমরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান করেও এত টাকা ইনকাম করতে পারি না। অনেক ভালো চলে এই ঝালমুড়ি।
ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে শাহেব আলী ভাই বলেন, আমি ঝালমুড়ি বিক্রি করে জমি কিনেছি। আরেকটু সময় নিয়ে বাড়ির কাজ ধরব। একটু জায়গা নিয়ে এখন খুব সুখেই আছি। দিনগুলো ভালোই যাচ্ছে। সামনের দিনগুলো এভাবে কাটাতে পারলেই হাজারও শুকরিয়া।
মন্তব্য করুন