‘যা প্রয়োজন এখন বাকিতে নিন, পরে সামর্থ্য হলে অন্য কোনো অভাবীকে ফেরত দিন’ এই স্লোগানে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পঞ্চগড়ে ‘বাকির হাট’ নামে সুপারশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মূলনীতি ছিল ‘বাকি ভেবে নিয়ে যান,পরে অভাবীকে দাম দিয়েন।’ সাধারণ দোকানদাররা বাকিতে পণ্য দিতে না চাইলেও এবার ঠিক উলটো কাজটি করতে যাচ্ছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। গরিব ও দুস্থদের বাকিতে পণ্য দিতে এবার তারা আয়োজন করেছে বাকির হাট।
আবার ‘বাকি চাহিয়া লজ্জা দেবেন না’ এমন একটি সাধারণ বাক্য প্রায় দোকানে ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। বাকিখোরদের কাছ থেকে মুক্তি পেতে সাধারণত এমন কাজ করে থাকেন দোকানিরা। তবে এমন ম্যাসেজ দেখে বাকীখোরদের থামানো না গেলেও নিম্নআয়ের মানুষ কিছুটা অস্বস্তিতে ভোগেন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে দুস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন বিপন্ন। আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে অনেকের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় কিছুটা ধারদেনা করে দোকান থেকে পণ্য না পেলে অভুক্ত থাকতে হয় তাদের।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) পঞ্চগড়ে আয়োজিত দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে প্রায় ২৫০ পরিবার বাকিতে পণ্য কেনার সুযোগ পায়। এ বাকির হাট সুপারশপ থেকে নির্দিষ্ট টোকেন নিয়ে দুস্থ ও অসহায় মানুষজন নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী ৬০০ টাকার ভিতরে বাকীতে বাজার করেছেন। এ সুপারশপে ২১টি পণ্যের সমাহার ছিল। এ সকল পণ্যে যেমন-চাল, ডাল, চিনি, তেল, মাছ, মুরগি, মিষ্টিকুমুড়া, চাল কুমুড়া, লাউ, ব্যাগ, জুতা, ছাতা, নুডলস, বিস্কুট, আটা, সুজিসহ ২১টি পণ্য কিনতে পেরেছেন ক্রেতারা।
বিদ্যানন্দের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুখ আহমেদ জানান, ‘বাকি চাহিয়া লজ্জা দেবেন না’ এই স্লোগানের পরিবর্তে ‘বাকি চাহিয়া লজ্জা পাবেন না’ এই স্লোগানটি তারা প্রমোট করছেন হত দরিদ্র মানুষের জন্য। এই পরিবারগুলোর আজকে টাকা নেই, কিন্তু একদিন তাদের টাকা হবে। সেদিন তারা এই টাকা পরিশোধ করবে। তবে বিদ্যানন্দকে নয়, সমপরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে অন্য কোনো অভাবীকে। এমন একটি শর্ত দিয়েই ৬০০ টাকার পণ্য দেওয়া হচ্ছে। তবে না দিলেও কোনো আপত্তি নেই। বাজার শেষে প্রতিটি ক্রেতার নাম ও বাকির পরিমাণ লিখে একটি আঙুলের ছাপ নিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা যা দিয়ে প্রতীকীভাবে এই বাকীর কথা খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। ভোজ্যতেল, চাল-ডালসহ ২১টি পণ্যের সমাহার ছিল সুপারশপে। নির্দিষ্ট টোকেন নিয়ে দুস্থ ও অসহায় মানুষজন নিজেদের চাহিদা মতো বাজার করেছেন।
তিনি আরও বলেন, মূলত মুলত দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই বাজারের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি সেবামূলক কাজের পেছনে একটি বার্তা থাকে। বাকির হাটের মাধ্যমে তারা সমাজের মানুষ যেন আরেকজন মানুষকে সাহায্য করে। এমনই একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে সাহায্য চাওয়া কোনো লজ্জার বিষয় না। বরং সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য করা মানবিক একটি দায়িত্ব। আর এই দায়িত্বের কথাই বিদ্যানন্দ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এমন উদ্যোগের মাধ্যমে।
কমলাপুর থেকে সুপারশপে বাজার করতে আসা রফিজ উদ্দীন (৮০) মুরগি, চাল, তেল আর ডিম নিয়েছেন। অনেক দিন পর মুরগির গোশত দিয়ে ভাত খেতে পারবেন বলে খুবই খুশি তিনি।
কমলাপুর থেকে সুপারশপে বাজার করতে আসা আছিয়া খাতুন (৬০) বলেন,আজকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সুপারশপে এসে নিজের পছন্দমতো মুরগি, ডিম, চাউ, তেল পেয়ে আমি অনেক খুশি।
পঞ্চগড় চেম্বার ভবনে বাকির হাটে পণ্য কেনা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রিয়াজউদ্দিন। তিনি বলেন, আজকের এই বাকির হাট সুপারশপ অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। বিদ্যানন্দের এই সকল মানবিক কার্যক্রমগুলো দেখে আমি খুবই আনন্দিত। সর্বোপরি ফাউন্ডেশনের এই কনসেপটি খুবই চমৎকার।
এ সময়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফরহাদ আহমেদ, বিদ্যানন্দের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুখ আহমেদ, কর্মসূচি সন্বয়কারী মো. হাসিব মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যানন্দের সদস্যরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় জরিপের মাধ্যমে অভাবী পরিবার চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট কার্ড প্রদান করে। সে কার্ড দেখিয়ে পরিবারগুলো বাকির হাট থেকে কেনাকাটার সুযোগ পায়।
মন্তব্য করুন