কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির ফলে সমতল এলাকাসহ চরাঞ্চলের প্রায় তিন হাজার ৪৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে পানিবন্দি হলেও এখনো বাড়িতে পানি ওঠার খবর পাওয়া যায়নি।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েকদিনে নিম্নঅঞ্চলের বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করবে। এরই মধ্যে গতবৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে শুরু করেছে। তবে চলমান পরিস্থিতিতে প্রায় ৪৭৩ পরিবার ভাঙনের কবলে পড়েছেন এবং পানিবন্দি হয়েছেন প্রায় তিন হাজার ৪৫০ পরিবার বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা।
ইতোমধ্যে নদের তীব্র ভাঙনে একটি স্কুল, একটি কলেজ ও একটি মাদ্রাসা নদের গর্ভে চলে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ঈদের আগে পানি কমতে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত নদ-নদীর পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামী ২৪-২৫ জুন থেকে পানি কমতে পারে।
পাউবোর তথ্য অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্রের পানি গতকাল শনিবার (২৪ জুন) সন্ধ্যা থেকে ১০ সেমি কমে আজ সকাল ৯টায় চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯০ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন চিলমারী পয়েন্টের গেজ রিডার জোবাইর হোসেন। কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে উপজেলার রানীগঞ্জ, নয়ারহাট, অষ্টমীরচর, রমনা ও চিলমারী ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নের চর মুদাফৎ, ছালিপাড়া, মুদাফৎকালিকাপুরের আংশিক এলাকা, নটারকান্দি, খোদ্দবাঁশপাতার, খামারবাঁশপাতার এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় দেড় হাজার পরিবার। এরমধ্যে ভাঙনের স্বীকার হয়েছেন চর মুদাফৎ, নটারকান্দি ও মুদাফৎকালিকাপুরের আংশিক এলাকা প্রায় শতাধিক পরিবার। পানিবন্দি হয়েছে নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়া, নাইয়ারচর, গয়নারপটল ও বজরা দিয়ারখাতার ২৫০ পরিবার ও ভাঙনের কবলে পড়ে গৃহহীন হয়েছেন ৭০টি পরিবার। এরই মধ্যে ওই ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়ার ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ও দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিত্যাক্ত ৭৪ লাখ টাকার একটি ভবন নদে বিলীন হয়ে গেছে।
রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আঁকা জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নে দক্ষিণ পাত্রখাতা এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কিছুটা ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে এই ইউনিয়নের পাত্রখাতা, জোড়গাছ, মাঝিপাড়া, সোনারিপাড়া, টোনগ্রামে প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ব্রহ্মপুত্র থেকে বাল্কহেড দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে চিলমারী ইউনিয়নের ১শ পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। অপরদিকে ওই ইউনিয়নের মানুষমারা, আমতলা, শাখাহাতী, জুগনিদহ, উত্তর শাখাহাতী, পশ্চিম গাজিরপাড়া এলাকায় প্রায় ৭শ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বলেন, তার ইউনিয়নের চরবড়ভিটায় নদীভাঙনের স্বীকার হয়েছেন তিনশ পরিবার। পানি বাড়ায় ওই ইউনিয়নের চরবড়ভিটা, চর উদনা ও নয়াবশ এলাকার প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছেন।
তবে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন থানাহাট ইউনিয়নের বাসিন্দারা। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শুধু সমতল এলাকায় পানি প্রবেশ করলেও পানিবন্দির সংখ্যা খুবই কম বলে নিশ্চিত করেছে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মিলন।
উপজেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ শাখা জানিয়েছেন, সার্বিক অবস্থার ওপর সর্তক নজর রাখা হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ শুরু করা হয়েছে।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, বন্যা মোকাবিলা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বলা হয়েছে পানিবন্দিদের তালিকা করতে। সেইসঙ্গে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সে সমস্ত শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি।
মন্তব্য করুন