রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে হাউজ বোট পর্যটকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চাহিদা থাকায় ২০১৯ সালের পর থেকে একে একে বাড়ছে হাউজ বোটের সংখ্যা। কিন্তু এইসব হাউজ বোটের নেই কোনো নীতিমালা। রাতে পর্যটকবাহী কোনো হাউজ বোটের অবস্থান কোথায় তাও জানেন না প্রশাসন।
গত শনিবার ভারতের শ্রীনগরের ডাল লেকে পর্যটকবাহী হাউজ বোটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে রাঙামাটির গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশল, পুলিশের কাপ্তাই সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার লোপা মুদ্রার স্বামী গণপূর্ত বিভাগের চট্টগ্রাম ডিবিশন ১ এর প্রকৌশলী ইমন দাশ গুপ্ত ও রাউজান উপজেলার এক ঠিকাদারের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের হাউজ বোটগুলো কোনো নীতিমালায় চলে তা নিয়ে না আলোচনা উঠে বিভিন্ন মহলে। আলোচনা গড়ায় জেলার আইনশৃঙ্খলা সভায়ও।
২০১৯ সালে প্রমোদিনী হাউজ বোটের মাধ্যমে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে প্রথম হাউজ বোটের যাত্রা শুরু হয়। যারপর থেকে বিভিন্ন নামে, নানা সুযোগ সুবিধা নিয়ে একে একে আরও ১৪টি হাউজ বোট যাত্রা শুরু করে। প্রতিটি হাউজ বোটই পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এইসব হাউজ বোটের বুকিং থাকে বেশ কিছুদিন আগে থেকে। রাঙামাটি হাউজ বোট মালিকদের তথ্য মতে, কাপ্তাই হ্রদে ১০ মালিকানাধীন ১৪টি হাউজ বোট বর্তমানে রয়েছে। যার মধ্যে দেড় থেকে ২০০ জন পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারে। প্রতিজন পর্যটক রাত্রিযাপন ও খাবারের জন্য প্রতিদিন খরচ করেন পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা। সারা বছরই কাপ্তাই হ্রদে পানি থাকা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ থাকায় সারা বছরই কম বেশি পর্যটক আসে এইসব হাউজবোটে। তবে ছুটির দিনগুলো ফাঁকা থাকে না বললেই চলে। নিজ নিজ সুবিধাজনক স্থানে হাউজবোটগুলো রাত্রিযাপন করে। জেলা প্রশাসক প্রদত্ত ট্রেট লাইন্সেস ও পৌরসভার ইঞ্চিনচালিত বোটের লাইন্সেস দিয়ে চলছে এই হাউজ বোটগুলোর ব্যবসা। হাউজ বোটমালিকরাও চান নিদিষ্ট নীতিমালার মধ্য দিয়ে চলতে, এতে পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি হাউজ বোট ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবে বলে মনে করছেন তারা। তবে হাউজ বোট ব্যবসাকে উৎসাহিত করতে নিদিষ্ট ঘাট তৈরিসহ সরকারি নানা সুযোগ সুবিধার সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তাও ব্যবসায়ীরা অনুভব করছেন।
রাঙামাটি প্রমোদিনী হাউজ বোট এর স্বত্বাধিকারী দীপাঞ্জন দেওয়ান জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রয়োজন নীতিমালা এবং তা যেন হয় ব্যবসায়ী বান্ধব, যাতে করে কাপ্তাই হ্রদ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে রাঙামাটির অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা যায়। কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসনের সাথে সভায় পর্যটক ও ব্যবসায়ী বান্ধব নীতিমালা করার জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। টাঙ্গুয়ার হাওরে ৪ মাসের ব্যবসায় প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকার হাউজ বোটে ব্যবসা হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদে সারাবছরই পানি থাকে, যা আমাদের এখানেও সম্ভব। আর হাউজ বোটে যারা আসেন তারা ভ্রমন পিপাসু পর্যটক, তারা বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ায়। সাধারণ ঘাট দিয়ে তাদের যখন বোটে তোলা হয় তখনই তাদের একটা নেগেটিভ ধারণা চলে আসে। হাউজ বোটে পর্যটকদের উঠানামার জন্য একটা ঘাট প্রয়োজন।
রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল আমিন জানান, কাপ্তাই হ্রদে হাউজবোটের কোনো নীতিমালা না থাকায় দিন দিন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে উঠছে হাউজবোট। পর্যটকরা কে কোথায় রাতে থাকেন, কীভাবে থাকেন, তাদের নিরাপত্তা কী, সে বিষয়েগুলো আমাদের জানা নেই। তাই পর্যটকরা রাতে কোন ঘাটে থাকেন, হাউজ বোটগুলো অগ্নিনির্বাপণে কী ব্যবস্থা আছে, সেগুলোর নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, সুনামগঞ্জে হাউজ বোট ব্যবসা রয়েছে, সেখানে কী ধরনের নীতিমালা রয়েছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে এবং কাপ্তাই হ্রদে হাউজ বোট মালিকদের সাথেও সভা হয়েছে কীভাবে নীতিমালা করা যায়। হাউজ বোটের নীতিমালার বিষয়ে আমরা কাজ করছি, যাতে করে ব্যবসায়ীরা যেমন সহজে ব্যবসা করতে পারে আবার পর্যটকদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে আমরা নীতিমালা তৈরি করতে পারব।
মন্তব্য করুন