শামীম খান জনী, মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০১:৪৫ পিএম
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০১:৫০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে মহেশপুরের গাছিরা

খেজুর গাছকে রসের জন্য প্রস্তুত করছেন মহেশখালীর এক গাছি। ছবি : কালবেলা
খেজুর গাছকে রসের জন্য প্রস্তুত করছেন মহেশখালীর এক গাছি। ছবি : কালবেলা

বৈচিত্র্যপূর্ণ ছয়টি ঋতুর দেশ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। শরৎ ঋতুকে বিদায় দিয়ে হেমন্তকে বরণ করেছে প্রকৃতি। একেকটি ঋতুর রয়েছে একেক রকম বৈশিষ্ট্য। ঋতু বৈচিত্রে এখন রাতের শেষে কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমন বার্তা। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে খেজুর রস সংগ্রের জন্য গাছিরা খেজুর গাছ কাটার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাক ডাকা ভোরে রস সংগ্রহ ও সন্ধায় চলছে গাছ পরিচর্যার কার্যক্রম। এবার কিছুটা আগেই সীমান্তবর্তী উপজেলা মহেশপুরের প্রান্তিক জনপদের গ্রামে গ্রামে সকালের শিশিরের সঙ্গে অনুভূত হচ্ছে মৃদু শীত। আর মাত্র কয়েক দিন পর রস সংগ্রহ করে রস থেকে নালি গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি উপজেলার প্রতিটি গ্রামে চোখে পড়ছে।

খেজুর রস ও গুড়ের জন্য সীমান্তবর্তী এই উপজেলার এক সময় খ্যাতি ছিল। সুঘ্রাণ নলের গুড় উপজেলার নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রাম ছাড়া পাওয়া যায় না। তা আবার চাহিদা তুলনায় অত্যন্ত কম। তার পরও যে রস, গুড় ও পাটালি তৈরি হয় তা দিয়ে শীত মৌসুমে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়। কিছুদিন আগেও বিভিন্ন এলাকার ক্ষেতের আইলে, রাস্তার দুই ধারে ও ঝোপঝাড়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। কোনো পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতো এসব খেজুর গাছ। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু খেজুর গুড়। কিন্তু মানুষের সচেতনতা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছ আর তেমন চোখে পড়ে না।

অপরদিকে ইট ভাটার রাহু গ্রাসে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বেশি হওয়ায় যে পরিমাণ গাছ চোখে পড়ে তাও নির্বিচারে নিধন করায় দিন দিন খেজুর গাছ কমছেই। এখনও শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসে গ্রাম বাংলার খেজুর রস খেতে। এক সময় সন্ধ্যাকালীন সময়ে গ্রামীণ পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠত। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোল, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করতেন। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন অবশ্যই সে কথা নতুন প্রজন্মের কাছে রূপ কথা মনে হলেও বাস্তব। যত বেশি শীত পড়বে ততবেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। এ গাছ ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। এটাই তার বৈশিষ্ট্য। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও কালের বিবর্তনসহ বন বিভাগের নজরদারি না থাকায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

উপজেলার গোপালপুর গ্রামের গাছি মনির উদ্দীন ও ফরজ আলী বলেন, এ বছর একটু আগে ভাগেই গাছ ঝোড়া বা কাটা শুরু করেছি। কয়েক দিনের মধ্যেই রস সংগ্রহের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। তারা আরও বলেন ভাটার কারণে অনেক খেজুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এখন তেমন একটা বেশি খেজুর গাছ না থাকায় গাছিরাও খেজুর রস সংগ্রহের জন্য তেমন আগ্রহ দেখান না।

এ ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য আর অপেক্ষার পালা। এ জন্য শীত মৌসুম আসার সাথে সাথে গাছিদের কদরও বেড়ে যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে মৃত্যুর মিছিল, তিন বছরে প্রাণ হারান ১৮৩ জন

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

সুদ দিতে না পারায় বসতঘরে তালা, বারান্দায় রিকশাচালকের পরিবার

দেশ বাঁচাতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে : চরমোনাই পীর

এএসপির বাসায় চাঁদাবাজি-ভাঙচুর, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

জেলের জালে বড় ইলিশ, ৯ হাজারে বিক্রি 

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন নিয়ে নতুন নির্দেশনা

আগামী সংসদ প্রথম তিন মাস ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব

ধরলার তীব্র ভাঙন, টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি

১০

নেতা ও ভোটারের জবাবদিহিই হবে শ্রেষ্ঠ সংস্কার : মঈন খান

১১

পাপের ফল ওদের ভোগ করতেই হবে : রাশেদ খান

১২

ক্ষমা চাইলেন স্বাধীন খসরু 

১৩

স্বাধীনতাবিরোধীরা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : আমিনুল হক

১৪

ঢাকায় উদযাপিত হলো রাশিয়ান পতাকা দিবস

১৫

একাদশে ভর্তিতে কোনো শিক্ষার্থী পায়নি ৩৭৮ কলেজ

১৬

৫০ হাজারে শ্লীলতাহানির রফাদফা করলেন সভাপতি-প্রধান শিক্ষক

১৭

কে বেশি টাকা দেয়, ফেসবুক নাকি ইউটিউব

১৮

অর্ধ বিলিয়ন জরিমানা থেকে রেহাই পেলেন ট্রাম্প

১৯

মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে থানায় জিডি মহানগর বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিনের

২০
X