দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়। প্রাচীন জনপদের এই জেলাটিতে হেমন্ত ও শীতকাল খুব ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য পর্যটককে আকৃষ্ট করে। দর্শনীয় হিসেবে বাড়তি পাওয়া যায় চা বাগান। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র রকস মিউজিয়াম। এ ছাড়া জেলাটিতে আছে অনেক দর্শনীয় স্থান। তেমনই একটি স্থান হচ্ছে ‘গোলকধাম মন্দির’।
সবুজ গালিচার বুক চিরে দর্শনার্থীরা চলে যেতে পারেন সেই গোলকধাম মন্দিরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
গোলকধাম মন্দিরটি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার একটি প্রাচীন মন্দির। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত স্থাপনা। মন্দিরটি উপজেলার শালডাংগা ইউনিয়নের শালডাংগা গ্রামে অবস্থিত।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত গোলকধাম মন্দিরটি অবিভক্ত ভারতবর্ষের মন্দির স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৪৬ সালে নির্মিত এই মন্দিরের শিলালিপি থেকে জানা যায়, এটি মূলত একটি স্মৃতি মন্দির। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। এটি অষ্টাদশ শতকের স্থাপত্যশিল্পের চমৎকার একটি নিদর্শন। গ্রিক স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে এটি নির্মাণ করা হয়।
সুদৃশ্য মন্দিরটি মূলত গোলককৃষ্ণ গোস্বামীর স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়। ফলে তার নামেই মন্দিরটির নামকরণ করা হয়।
গোলকধাম মন্দিরটি একটি প্রাচীন উঁচু প্ল্যাটফর্মের ওপর স্থাপিত ছয় কোনাকার মন্দির। মন্দিরে প্রবেশের জন্য রয়েছে ছয়টি গেট। প্রতিটি প্রবেশদ্বারের উভয় পাশে রয়েছে পিলার। এর প্রতিটির নিচে গোলাকার ও উপরের ভাগ ফুলের নকশায় সুশোভিত। এর ভেতরে একটি কক্ষ রয়েছে। আর মন্দিরের চতুর্দিক গাছপালা দিয়ে ঘেরা। মন্দিরটির মূল প্রবেশদ্বারে রয়েছে সুদীর্ঘ সিঁড়ি। এর দুপাশে রয়েছে দুটি তুলসী মঞ্চ। তবে বহু দিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একটি তুলসী মঞ্চ ভেঙে গেছে। অপরটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এ ছাড়া মন্দিরের সামনে রয়েছে একটি কুয়া। তবে বর্তমানে সেই কুয়াটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জানা গেছে, তৎকালীন সময় মন্দিরটিতে পূজা-অর্চনায় পানি সরবরাহের জন্য এই মন্দির নির্মাণ করার সময় এই কুয়া নির্মাণ করা হয়েছিল।
ইট, সুরকি, চুন, পাথর ও কাঠের সমন্বয়ে অনন্য গ্রিক স্থাপত্যকলায় নির্মিত এই মন্দিরটি পঞ্চগড় জেলার অনন্য নিদর্শন।
এদিকে এই মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে উত্তরবঙ্গের প্রাণের নদী করতোয়া।
রাজধানী থেকে সড়কপথে পঞ্চগড়ে যেতে পারেন। পঞ্চগড় থেকে যেতে পারেন দেবীগঞ্জ উপজেলায়। উপজেলা থেকে যাবেন শালডাংগা ইউনিয়নের শালডাংগা গ্রামে।
আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য রেলপথেও যেতে পারেন। তবে এর জন্য রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দিনাজপুরগামী আন্তঃনগর ট্রেনে উঠতে হবে। দিনাজপুরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বাসে চড়ে পঞ্চগড় যেতে পারবেন। আবার চাইলে বিমানপথেও যেতে পারেন। এর জন্য প্রথমে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যেতে হবে। এরপর বাসযোগে পঞ্চগড়। পঞ্চগড় থেকে দেবীগঞ্জ উপজেলায়।
পঞ্চগড় শহরে রাত্রিযাপনের জন্য আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল মৌচাক, হোটেল রাজ নগর, হিলটন বোর্ডিং, রোকখানা বোর্ডিং, হোটেল প্রীতম, হোটেল এইচ কে প্যালেস ও হোটেল ইসলাম উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি প্রচলিত সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। খাবারের দামও তুলনামূলক কম।
মন্তব্য করুন