সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণের পরেও চালকদের ইচ্ছেমতো বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। দিন দিন নিয়ন্ত্রণহীণ হয়ে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া। নানান ফন্দিতে সিএনজি ভাড়া বেশি নিচ্ছেন চালকরা। এ নিয়ে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে বিড়ম্বনা। এমনই অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লার কুমিল্লা-মিরপুর সড়কের সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে ।
জানা গেছে, জেলা শহর কুমিল্লা থেকে বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কাছাকাছি হওয়ায় বিভিন্ন দপ্তরের অনেক কর্মকর্তা কুমিল্লা থেকে এসে অফিস করেন। এ ছাড়াও এই সড়কে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াত করেন। আর একে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে এ সড়কে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন।
ভুক্তভোগী যাত্রী আহাদ মিয়া ( শ্রমিক) জানান, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা থেকে জেলা সদরে প্রতিদিন যাতায়াত করি। আমাদের মত জনসাধারণ জীবিকার নির্বাহ করার জন্য জেলার ওপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন সকাল, সন্ধ্যা ও রাতে শতশত মানুষ যাতায়াতের জন্য সিএনজি চালিত আটোরিকশা ব্যবহার করে। এই সুযোগে কিছু অসাধু সিএনজি চালক নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। এসব দেখার কেউ নেই।
এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রী মহসিন আলম জানান, এ সড়কের সিএনজি চালকরা তাদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। এ ছাড়াও এই সড়কে অধিকাংশ লাইসেন্সবিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক রয়েছে । যাদের কোন প্রকার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। নেই যানবাহন চালানোর তেমন অভিজ্ঞতা। এমন অদক্ষ চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনোর কারণে সড়কে হরহামেশাই ঘটছে ছোটবড় দূর্ঘটনা।
সরেজমিনে ভুক্তভোগী যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লা - মিরপুর সড়কে আকাশ মেঘলা হলে ভাড়া বৃদ্ধি পায়, বৃষ্টি পড়লে ভাড়া বেড়ে যায়। গাড়ি কম থাকলে, যাত্রী কম ও বেশি থাকলেও ভাড়া বেড়ে যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর প্রায় ঘোষিত ভাবেই ভাড়া বেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার ভাড়া বেড়ে যায়। জাতীয় কোন সমস্যা বা উৎসব দেখলেই ভাড়া দ্বিগুণ হারে বাড়ে। এ যেন এক হরিলুটের সড়ক। কুমিল্লা বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া ভাড়ার নিধারিত চার্ট থাকলেও সন্ধ্যার পর কোনো কাজে লাগে না।
এদিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রশাসন বলছে এ সড়কে সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। শাসনগাছা থেকে ব্রাহ্মণপাড়া নির্ধারিত সিএনজি ভাড়া ৫০ টাকা, বুড়িচং ৩০ টাকা।
অথচ এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীরা বলছেন ভাড়া নির্ধারিত করা হলেও, প্রায় সময়ই শাসনগাছা থেকে ব্রাহ্মণপাড়া ৭০, ৮০ ও ১০০ টাকা করে ভাড়া আদায় করছে চালকরা। কুমিল্লা থেকে বুড়িচং নির্ধারিত ৩০ টাকা ভাড়া হলেও প্রায় সময়ই ৪০, ৫০ ও ৬০ টাকা আদায় করছে, কখনও ১০০ টাকা করেও ভাড়া আদায় করছে কিছু অসাধু সিএনজি চালক ।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক সিএনজি (অটোরিকশা) চালক জানান, কিছু চালক বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে ঠিকই। প্রতিটি সিএনজি থেকে মাসিক চুক্তি ভিত্তিতে টোকেনের টাকা দিতে হচ্ছে। এ সড়কে একটি সিএনজি ( অটোরিকশা) চলাচল করলে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত প্রতিদিন জিবি এবং অন্যান্য চাঁদা দিতে হয়। আমরা সারাদিন পরিশ্রম করে গ্যাস নেওয়া, সিএনজির মালিকের জমা ও জিবি দিয়ে মাঝে মধ্যে খালি পকেটেও বাড়ি ফিরতে হয়। এ ব্যাপারে কুমিল্লা জজকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট আব্দুল আলিম খান জানান, আমি ব্রাহ্মণপাড়া থেকে প্রতিদিন এসে কুমিল্লা আদালত করি, যাওয়ার পথে প্রতিদিন আমাকে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়। সাধারণ যাত্রীরা প্রতিদিন এই সড়কে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু সরদার বলেন, বেশিরভাগ কুমিল্লা থেকে আসা সিএনজিগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকেন, তবে এটা ঠিক নয়। আমি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কুমিল্লা শ্রমিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ করব যাতে সাধারণ যাত্রীরা ভোগান্তি শিকার না হয়। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়ার ইউএনও স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি এই বিষয়টি আজই দেখছি এবং যারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য করুন