শীত যত বাড়ছে, খেজুরের গুড়ের চাহিদাও ততই বাড়ছে। তাই দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় খেজুর রস সংগ্রহ ও রস থেকে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।
গাছিরা জানায়, প্রতিদিন বিকেলে তারা খেজুরগাছের সাদা অংশ চ্যাচ দিয়ে বিভিন্ন রকমের মাটির হাঁড়ি লাগিয়ে রাখা হয়। পরদিন ভোরে সব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে টিনের বড় পাত্রে জ্বাল দিয়ে পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করা হয়।
স্থানীয়রা জানায়, ভারত সীমান্তবর্তী দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার রেল লাইনের দুপাশে খেজুর গাছের সংখ্য বেশি। রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে আসা গাছিরা শীতের শুরুতেই গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে।
উপজেলার রেললাইনের পাশে ২৫০টি খেজুর গাছ আছে। এসব খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ ও গুড় তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।
বিরামপুর উপজেলার মৌপুকুর ও বারোকোনা এলাকায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে আসা খেজুর রস সংগ্রহকারী রবিউল ইসলাম (৪২), হাবিবুর রহমান (৩৫), রবিউল ইসলাম রবি (৩২) খেজুরের গুড় তৈরির কাজে চলে এসেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা গুড় তৈরির কাজ করে আসছেন। বছরের পাঁচ মাস তারা এই কাজ করেন দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে। বাকি সময় এলাকায় থেকে অন্য ব্যবসা করেন। শুরুতেই ২০-২৫ কেজি করে খেজুরের গুড় তৈরি হয়। পর্যায়ক্রমে বেড়ে ১-২ মণ পর্যন্ত গুড় তৈরি হয়। প্রতি কেজি খেজুরের গুড় বাজারে পাইকারদের কাছে ১৮০ টাকায় এবং খুচরা ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
ঘরে ঘরে খেজুর রসের পিঠা, পায়েস, গুড়ের মুড়ি-মুড়কি ও নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরির ধুম পড়ে এ সময়। তবে অনেকেই বলছেন, বাজারে চিনির দাম বেশি এবং চিনির দামের থেকে একটু বেশি হলেও সুস্বাদু হওয়ায় খেজুরের গুড়ের চাহিদা রয়েছে বেশ।
ভোরেই গুড় কিনতে এসেছেন আবু তাহের তিনি বলেন, ‘শীত শুরু হয়েছে। পিঠা-পায়েস খেতে স্বাদে গন্ধে সুস্বাদু খেজুরের গুড়ের জুড়ি নেই। গাছিদের তৈরি গুড় মানসম্মত, সে কারণে এখানে গুড় কিনতে এসেছি।’
স্থানীয় কৃষক মনছুর আলী বলছিলেন, ‘শীতকালে খেজুর গুড় বা নলেন গুড় ছাড়া বাঙালির চলে না। শীত মানেই পিঠাপুলি-পায়েস, আর খেজুর গুড় ছাড়া ভাবাই যায় না। বর্তমানে অবশ্য ভেজালের যুগে এই গুড়ের স্বাদ আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না।’
মন্তব্য করুন