চলতি রবি মৌসুমে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের দুর্গম চরাঞ্চলের আজিমনগর, সুতালড়ি ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নেই ভুট্টা চাষ হয়েছে প্রায় ৬০ ভাগ। চরাঞ্চলে দোঁআশ মাটির পরিমাণ বেশি হওয়ায় অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টার ফলন অধিক হয়। এতে উৎপাদনের খরচের চেয়ে তুলনামূলক অনেকটাই বেশি লাভবান হওয়ায় আগের চেয়ে সম্প্রতি ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এতে করে শুধু উপজেলার চরাঞ্চলের ৩টি ইউনিয়নেই ভুট্টার চাষ হয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলে এ পর্যন্ত ভুট্টার আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু চরাঞ্চলেই আবাদ হয়েছে প্রায় ২ হাজার হেক্টরের অধিক। মোট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৩৪১ হেক্টর জমি আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ হাজার ৪০৮ টন। তবে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে পারে বলেও সূত্র জানায়।
চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়নের বসন্তপুর আদর্শ গ্রামের কৃষক মোশারফ হোসেন জানান, আমি এ বছর ৫২ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগাইছি। এতে আমার প্রতি বিঘায় ৩০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পরলে প্রতি বিঘায় গড়ে ৫০ মণ ভুট্টা পাওয়া যাবে। যদি ১ হাজার টাকা মণ বিক্রি করতে পারি তাহলেও প্রতি বিঘায় ২০ হাজার টাকা লাভ হবে। গত বছর ১০০ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগাইছিলাম। কিন্তু পদ্মার ভাঙনে এ বছর আমার অনেক জমি নদীতে চলে গেছে। তাই এ বছর আবাদি জমির পরিমাণ আমার কম।
একই গ্রামের মাসুদ জানান, আমি এ বছর ২০০ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করছি। আমার প্রতি বিঘায় ৩৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। কিছু জমি বছর চুক্তিতে কিনে লাগানোর কারণে আমার খরচটা একটু বেশি হইছে। তারপরেও ফলন যদি ভালো হয় আর ঝড় বৃষ্টির কবলে না পড়ে, তাহলে ভালোই লাভবান হবো, ইনশাআল্লাহ।
একই ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের আলমগীর মেম্বার জানান, আমি ১৫০ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগাইছি। আশা করছি ভালো ফলন পাব। ফলন ভালো হলে টাকা তো কম বেশি পাবই ইনশাআল্লাহ। তবে আমাদের চাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ভুট্টা হয়। যা উপজেলার অন্যান্য জায়গায় হয় না। আর ভুট্টা চাষে খরচের তুলনায় লাভ অনেক বেশি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান কালবেলাকে জানান, ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার ও ভালো দাম পাওয়ায় এ উপজেলায় ভুট্টার আবাদ গত কয়েক বছরে অনেক বেড়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৩৩৪১ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এর আবাদ আরও বাড়বে। ভুট্টা চাষ এই অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে বিশেষ করে চর এলাকার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। কৃষক যাতে ভালোভাবে ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারে, সে জন্য উপজেলা কৃষি অফিস সব সময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন