১৪ নভেম্বর সকালে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মীরবাগ বাজারে এলোমেলোভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধাকে। স্থানীয় বিপুল মিয়া নামে এক ব্যক্তি তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন তিনি কিছুটা মানসিক রোগী। তার এলোমেলো কথাবার্তার মধ্যে শুধু তার নাম মালেকা বেগম ছাড়া আর তেমন কিছু তিনি ঠিকঠাকভাবে বলতে পারছিলেন না।
এই পরিস্থিতিতে বিপুল মিয়া ‘হামার পীরগাছা’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে ওই বৃদ্ধার পরিবারের সন্ধান চেয়ে একটি ছবি পোস্ট করেন। সেই পোস্টের সূত্র ধরে ১৫ নভেম্বর সকালে ওই গ্রুপের এডমিন স্বেচ্ছাসেবী দুই বন্ধু বেলাল ও ফুয়াদ ওই বৃদ্ধাকে তার পরিবারের খোঁজ বের করে ফিরিয়ে দিতে মীরবাগে চলে যান।
সেখানে যাওয়ার পর থানা পুলিশের সহায়তায় ও বিভিন্ন কৌশলে ওই বৃদ্ধার নিকট প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে বুঝতে পারেন ওই বৃদ্ধার বাড়ি দিনাজপুর জেলার বিরামপুর থানার ধানগড়া গ্রামে। এরপর দুই বন্ধু বৃদ্ধার এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন তার শামীম নামে একটা ছেলে রয়েছে। অতঃপর বেলাল ও ফুয়াদ বৃদ্ধার ছেলে শামীমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আজকের রাতটা মাকে আপনাদের কাছে রাখেন। আগামীকাল সকালে আমরা গিয়ে তাকে নিয়ে আসব।
এরপর দুই বন্ধু বৃদ্ধাকে মীরবাগ থেকে পীরগাছায় নিয়ে এসে দেবী চৌধুরানী বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র নামে একটি বৃদ্ধাশ্রমে এক রাতের জন্য থাকার ব্যবস্থা করেন। পরের দিন (১৬ নভেম্বর) বৃদ্ধার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি জানান, তার মা মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বের হয়ে হারিয়ে যান। মানুষজন তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যায়। এই ব্যাপারটি নিয়ে তারা খুবই বিরক্ত। তা ছাড়া তার আর্থিক অবস্থাও শোচনীয়। পীরগাছা থেকে তার মাকে যে নিয়ে আসবে সেই টাকাও নাকি তার কাছে নেই।
এই কথা শুনে দুই বন্ধু বৃদ্ধার ছেলের মোবাইলে ৩শ টাকা পাঠিয়ে দেন। টাকা পাওয়ার পর ছেলে শামীম জানায়, তার এক ফুফাতো ভাইকে টাকাসহ তিনি পীরগাছায় পাঠাচ্ছেন। টাকা পাওয়ার পর শামীমের ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি এবং শেষ পর্যন্ত তিনি আর আসেননি। ১৭ নভেম্বর সারাদিন ব্যর্থ চেষ্টার পর ছেলে শামীম সাফ জানিয়ে দেয়, তার মাকে তিনি নিবেন না এবং তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দেন। অতঃপর বৃদ্ধা হামিদা বেগমের ঠাঁই হয়েছে এক রাতের অতিথি হয়ে যাওয়া সেই বৃদ্ধাশ্রমে।
সরেজমিনে ২৮ নভেম্বর ওই বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে মালেকা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তিনি তার ছেলেকে দেখতে চান। তার কাছে যেতে চান।
দেবী চৌধুরানী বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক রাজেকা বেগম কালবেলাকে বলেন, মালেকা বেগম মাঝেমধ্যেই তার ছেলেকে দেখতে চান। তার ছেলে আসব আসব বলে এতদিন পেরিয়ে গেলেও এক দিনও তার মাকে দেখতে আসেনি। উনি যতদিন বেঁচে আছেন আমার এখানেই থাকবেন।
দুই বন্ধু বেলাল ও ফুয়াদ কালবেলাকে বলেন, এর আগেও তারা কয়েকজন হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এবারের ঘটনাটি তাদের কাছে একদম ব্যতিক্রম। বিষয়টি নিয়ে কালবেলার প্রতিবেদক বৃদ্ধার ছেলে শামীমের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মন্তব্য করুন