ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় সারা দেশব্যাপী জেঁকে বসেছে শীত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শীতের দাপটে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়লেও জীবিকার তাগিদে বসে থাকতে পারেন না জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা বিজয়নগরের নিম্ন আয়ের শ্রমিকেরা। দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাতে কাকডাকা ভোরে কনকনে শীতের মধ্যেও হাতে হাঁড়ি, ঘাড়ে ঢাকি আনতা, পেলুইন, ঝুড়ি, ক্যারেট আর ছোট ছোট লাঠি, জাল নিয়ে খুব সকালে ছুটে যেতে দেখা যায় তিতাস নদীর তীরে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে গিয়ে দেখা যায়, শীত ও কুয়াশার কারণে নদীতে নামার অপেক্ষা করছেন অনেকেই। অনেকেই আবার শীত-কুয়াশা উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে ঠান্ডা পানি এবং কাদা মাটিতে নেমে মাছ ধরা শুরু করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বুক চিরে বয়ে চলেছে তিতাস নদী। তিতাসের বুকে তেমন কোনো ইতিহাস নেই। সে শুধু একটা নদী। সওদাগরের নৌকারা পাল তুলে তার বুকে বিচরণ করতে আসে না। তিতাসকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খাল-বিল। যেগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অসংখ্য পল্লী গ্রামের মানুষ জীবন-জীবিকা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর আশপাশে নিচু জমি এবং খাল-বিলে পানি কমে আসায় মাছ ধরার যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। পানি তলানিতে পৌঁছে গেছে বিজয়নগরের গ্রামগুলোর খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়গুলোতে। হাঁটুপানি সেচে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ ধরতে দেখা যায় শিশু, কিশোর-কিশোরী, নারী-পুরুষদের।
এসব খাল ও নিচু জমিতে বর্ষার মৌসুমে পানির সঙ্গে ঢুকে পড়ে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য মাছ। খাল-বিল, পুকুর-ডোবা শুকিয়ে যাওয়ায় থালা-বাটি আর পাম্প মেশিন দিয়ে পানি সেঁচে গ্রামাঞ্চলের মানুষজন পানি-কাদায় হাতড়ে ধরছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। বিলের পানি কমে গেলে এই পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয়ে থাকে। আগে বিলে প্রচুর মাছ ছিল, তাই এই মৌসুমে প্রায় প্রতিদিনই পলো দিয়ে অসংখ্য মৎস্য শিকারি মাছ ধরত। কিন্তু এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন মৎস্য শিকারিরা।
শ্রীপুর গ্রাম থেকে বিলে মাছ ধরতে আসা গোলাম মোস্তুফা (৫৯) বলেন, ‘আমাগো আবার শীত! কাম না করলে খামু কী? শীতের কারণে মানুষ যখন ঘরে বসে আরাম করে কিংবা গরম কাপড় পড়ে ঘুরে বেড়ায় তখন আমরা মৎস্য শিকারিরা জীবিকার তাগিদে ঠান্ডা পানি, কাদা মাটিতে নেমে মাছ ধরি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যেসব মাছ সংগ্রহ করি, সেসব সন্ধ্যায় বিক্রি করে যা পাই তা দিয়েই সংসার চলে। তবে খুব সকালে এসে মাছ ধরে দুপুরের আগে বাজারে নিয়ে যেতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যায়। বিকেলে ক্রেতা কম থাকে, তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করতে হয়।’
কাঞ্চপুর থেকে আগত মোবারক কাজী (৪৩) জানান, আমি ১৩ বছর বয়স থেকে মাছ ধরি। প্রতিবছর এই মৌসুমে আমরা এই বিলে মাছ ধরতে আসি। আজও এসেছি তিতাস নদীর তীরবর্তী কাইজলা বিলে মাছ ধরতে। পলো দিয়ে, হাত দিয়ে মাছ ধরা আমার দীর্ঘদিনের পেশা। তবে আগেকার তুলনায় দেশীয় প্রজাতির মাছ কমে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। নিজে মাছ ধরলেও পরিবারকে নিয়ে ভালো-মন্দ মাছ খাওয়াতে পারি না। কেননা আমরা নিজেরা মাছ খেতে চাইলে চাল-ডাল কেনা হবে না।
মন্তব্য করুন