সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুইপক্ষের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে ঘোড়াডুম্বুর গ্রামের কাজিবাড়ির পক্ষে ৬ গোষ্ঠী ও হাজিবাড়ির গোষ্ঠীর মধ্যে পঞ্চায়েতি কবরস্থানের পাশের জমিতে এই সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
গ্রামের ছয় গোষ্ঠীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন নূর মিয়া, ওদুদ মিয়া, আকিক মেম্বার ও আফরোজ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন। অপরদিকে হাজিবাড়ির পক্ষে নেতৃত্ব দেন মো. আলী হোসেন। এ সময় কাজিবাড়ির পক্ষ থেকে একাধিক বন্দুক দিয়ে গুলি ছুড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মো. আলী। যদিও পুলিশ বলছে, গুলি ছোড়ার কোনো আলামত তারা পাননি।
মো. আলীর পক্ষের আহতরা হলেন- ইছব আলীর ছেলে আতাউর রহমান (৫০), লুতফুর রহমান (৪০), হাফিজুর রহমান (৩৮), ফয়জুর রহমানের ছেলে সেলিম আহমদ (৩০), জব্বার আলীর ছেলে লিমন আহমদ (১৮), আতাউর রহমানের ছেলে রেদুয়ান আহমদ (২০), মজুমদার আলীর ছেলে নাছির মিয়া, বাবুল মিয়া (৪৫), নুরুজ্জামাল (৪২), রেওল মিয়া (৩৮), আব্দুল জলিলের ছেলে লাইছ মিয়া (৪০), হেলাল মিয়া (২৮), আবদুল মনাফের ছেলে জামাল মিয়া (৩৮), নিজাম উদ্দিন (৩০), নিস্তার আলীর ছেলে সজিদ আলী (৩৫), হোছন আলী (২৫), ইছবর আলীর ছেলে রহিম আলী (৩৫), মখরম আলীর ছেলে লাল মিয়া (৫০), সানজব আলীর ছেলে গৌছ আলী (৪৫), ইছকন্দর আলীর ছেলে ছায়েদ (২৮), বাবরু মিয়ার ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৪৫), করম আলীর ছেলে সুমন মিয়া (২৮), ইছকন্দর আলীর ছেলে জুবের মিয়া (২৫), আসদ আলীর ছেলে মুজিবুর (২৮), ইছবর আলীর ছেলে তজব আলী (৫০), সিরাজুল (৪৮), রশীদ আলীর ছেলে সুজন মিয়া (৩০), ইছকন্দর আলীর ছেলে সাইফুল (২৮), মজুমদার আলীর ছেলে তোয়াজমীর (৫৫), শুকুর আলীর ছেলে রায়হান মিয়া (২৮), আসদ আলীর ছেলে বাদশা মিয়া (২৬), আরজক আলীর ছেলে সৈয়দ মিয়া (৩৮), আলখাছ আলীর ছেলে সায়েক মিয়া (২০), আহমদ আলীর ছেলে রিমন মিয়া (২০) ও নুরুল মিয়ার ছেলে হাছান মিয়া (১৮)।
অপরদিকে ঘোড়াডুম্বুর গ্রামের কাজিবাড়ির পক্ষে আহতরা হলেন- নূর মিয়া (৭০), বারিক উল্লার ছেলে নিজাম উদ্দিন (৪০), জালাল মিয়া, মিহার উদ্দিনের ছেলে আনর আলী (২৫), মিলন মিয়া (৩০), ওয়ারিছ আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন (৫০), হারুন মিয়ার ছেলে রাহীম আলী, দলাই মিয়ার ছেলে রেজবুল মিয়া (২৫), আমির উদ্দিনের ছেলে শরীফ উদ্দিন, মিহাদ উদ্দিনের ছেলে রুবেল মিয়া, কাজি আকিল উদ্দিনের ছেলে কাজি ফজলু মিয়া।
শুক্রবার দুপুরে ঘোড়াডুম্বুর গ্রামে গিয়ে থমথমে পরিবেশ ও রাস্তায় রাস্তায় ইটের ভাঙা সুরকি পড়ে থাকতে দেখা যায়। সংঘর্ষের পরে ৮ জনকে গ্রেপ্তারের পর পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে গ্রাম। মসজিদে মুসল্লির সংখ্যাও তুলনামূলক কম ছিল।
স্থানীয়রা জানায়, কবরস্থানের পাশে ৪.৩৯ একর জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজির গোষ্ঠীর ওদুদ মিয়া ও হাজির গোষ্ঠীর মো. আলীর মাঝে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে শুক্রবার সকালে গ্রামের ৬ গোষ্ঠী কাজিবাড়ির পক্ষ হয়ে হাজিবাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। একাধিক গুলির শব্দও শুনেছেন অনেকে।
কাজিবাড়ি ও ছয় গোষ্ঠীর পক্ষে মো. নূর মিয়া বলেন, আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। সকলের গায়ে গুলি। আপনারা হাসপাতালে এসে দেখে যান।
হাজিবাড়ির পক্ষে মো. আলী বলেন, আমাদের গ্রামের কবরস্থানের আশেপাশে ক্রয়সূত্রে ৪.৩৯ একর জায়গার মালিক আমরা। গণিপুর গ্রামের গৌছ উদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে কেনা জমি এগুলো। ২০০২ সাল থেকে কোনো আপত্তি ছাড়াই আমরা ভোগ দখল করে আসছি। গত দুই বছর যাবত কাজিবাড়ির লোকজন একটি মামলা করে এখানে ১.৩৯ একর জায়গা দাবি করেন। মামলায় আমরা রায় পেয়েছি। এখানে একাধিক মামলা হয়েছে। সব মামলায় আমরা রায় পেয়েছি। একটি মামলা চলমান। ১৪৪ ধারায় তারা মামলা করেছিল, সেটিও আমাদের পক্ষে এসেছে। বৈধ সব কাগজ থাকার পরও তারা আমাদের জায়গা কেড়ে নিতে চায়। আজ জায়গা দখল করার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ হয়। তারা বন্দুক দিয়ে গুলি ছোড়ে। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
শান্তিগঞ্জ থানার ওসি কাজী মোক্তাদির হোসেন বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনি। দেশীয় অস্ত্রসহ ৮ জনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করেছি। একপক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে গোলাগুলির অভিযোগ করছেন। তবে আমরা তেমনটি পাইনি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মন্তব্য করুন