সবুজে ঘেরা চার গ্রামের মাঝখানে সদ্য ধানকাটা ফাঁকা ফসলি মাঠ। মাঠের মধ্যে গোলাকার সীমানার বাইরের অংশ দর্শক দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ। সীমানার ভেতরে দ্রুতবেগে ছুটছে লাল, কালো আর সাদা রঙের টগবগে ঘোড়া। ঘোড়ার পিঠে চাবুক হাতে ঘোড়াকে তাড়া দিচ্ছে কিশোর বয়সীসব সাওয়ারি। দিনাজপুরের সুন্দরী রানী, নীলফামারীর রাজাবাবু, ঘোড়াঘাটের বাহাদুর, দুরন্ত, গোপালপুরের হিটলার ও রোবটসহ ৩২টি প্রতিযোগী ঘোড়ার দৌড়ে মুগ্ধ কয়েক গ্রামের বাসিন্দা।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ৭নং পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের টাটকপুর গ্রামের মাঠে এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। স্থানীয় পলিপ্রয়াগপুর মৎস্যচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেড এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। রংপুরের মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের বিরামপুর, বিরল, ঘোড়াঘাট, চিরিরবন্দর ও ফুলবাড়ী উপজেলা থেকে ৩২ জন প্রতিযোগী ঘোড়া নিয়ে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এ গ্রামে দ্বিতীয়বারের মতো ঘোড়দৌড় খেলা দেখতে উৎসুক দর্শকের ছিল উপচে পড়া ভিড়। উপজেলা ও উপজেলার বাইরে থেকে দর্শকরা খেলা দেখতে এসেছিলেন। ঘোড়দৌড় দেখতে কেউ এসেছিলেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে, আবার কেউ বাড়ির আদরের নাতি-নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে এসেছিলেন। পরিবার ও দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজনরা খেলা দেখতে আসায় মাঠে বসেছিল মিলনমেলা।
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার মাঠের চারপাশ ঘিরে বসেছে ভাপাপিঠা, ফুচকা, চটপটি, জিলাপি, ঝালমুড়ি, বাদাম, পিঁয়াজু, চা, ছোটদের গ্রামীণ খেলনাসহ রকমারি দোকান। ঘোড়দৌড় দেখার পাশাপাশি মাঠের দোকান থেকে কেনাকাটা করেছেন আগত দর্শকরা।
দর্শকসারিতে বসে নাতনি রোমানাকে (৪) নিয়ে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখছেন বিরামপুরের হাবিবপুর গ্রামের বাদশা মিয়া (৬২)। বাদশা মিয়া বলেন, এই মাঠের পাশের গ্রামে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। মেয়ে গত বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখার জন্য আমাকে দাওয়াত দিয়েছিল। মেয়ের বাড়িতে এসে নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে এসেছি। ঘোড়দৌড় দেখে নাতনি খুব খুশি হয়েছে।
পলিপ্রয়াগপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহিদুন নেছা (৭২) তার বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে মাঠে ঘোড়দৌড় দেখতে এসেছেন। তার সঙ্গে এসেছেন ভাতিজা বউ কোহিনুর বেগম। শাহিদুন নেছা বলেন, ছোটবেলায় পাড়ার মানুষের সঙ্গে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ঘোড়দৌড় দেখতে যেতাম। টাটকপুর গ্রামের মাঠে ঘোড়দৌড় খেলা হবে শুনে লোভ সামলাতে পারি নাই। তাই হেঁটে হেঁটে এসেছি।
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজক, পলিপ্রয়াগপুর মৎস্যচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি শাহনেওয়াজ ফিরোজ শুভ শাহ বলেন, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা গ্রাম-বাংলা থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতেই আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এলাকার যুবসমাজকে মাদকের ছোবল থেকে ফেরাতে ও তাদের সুস্থ বিনোদন দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গের তিন জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৩২ জন প্রতিযোগী চারটি দলের মাধ্যমে এ খেলায় অংশ নিয়েছেন। দর্শকরা এ খেলা অত্যন্ত আনন্দের সাথে উপভোগ করেছেন। গোপালপুরের হিটলার ঘোড়া চ্যাম্পিয়ন ও ঘোড়াঘাটের বলগাড়ির বাহাদুর ঘোড়া রানার আপ হয়।
মন্তব্য করুন