দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ (শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা উপজেলা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন মো. গোলাম মোস্তফা হাওলাদার। আসনটিতে তার প্রতীক ঈগল পাখি। নির্বাচনে বিজয়ী হতে তাকে ভোটারদের কাছে পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে হবে। প্রচার চালাতে হবে ঈগল প্রতীকের, যেমনটা অন্যান্য প্রার্থীরা করে থাকেন। কিন্তু গোলাম মোস্তফার প্রচারণায় নেই কোনো নেতাকর্মী বা সমর্থক। তবু তিনি দমে যাননি। একাই চালাচ্ছেন নিজের প্রচারণা।
নির্বাচন এলে দেখা যায় ভোটের প্রচার মানেই দলবদ্ধভাবে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়া, পোস্টার লাগানো থেকে শুরু করে জনসভার আয়োজন করা। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে ব্যতিক্রম। স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গোলাম মোস্তফা হাওলাদার একাই নিজের প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারের জন্য যখন এ আসনের অন্য প্রার্থীরা দলবল নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা হাওলাদাররের প্রচারে রয়েছে ভিন্নতা।
অটোরিকশায় মাইক লাগিয়ে একাই ছুটে চলেছেন নিজের পক্ষে ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে। আবার প্রার্থীরা যেখানে ভোটারদের চা খাওয়ান, সেখানে ভোটাররা এই প্রার্থীকে চা খাওয়ান। তপশিল ঘোষণার পরই শরীয়তপুর-১ আসনে প্রথম মনোনয়ন কেনেন জাজিরা উপজেলার নাওডোবার গোলাম মোস্তফা। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তার বাৎসরিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ সাড়ে ৭ লাখ টাকা। আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাঁচ প্রার্থীর সঙ্গে লড়ছেন এই মোস্তফা হাওলাদার।
মোস্তফার এই ব্যতিক্রমধর্মী প্রচারে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। ভাড়ায় নেওয়া একটি অটোরিকশা নিয়ে প্রতিদিন তিনি অন্তত ৫ থেকে ৬টি ইউনিয়নে প্রচার করে থাকেন। নির্বাচনী কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন অটোরিকশা চালক ও দুই সহযোগী। এই অটোরিকশায় দুটি মাইক লাগানো রয়েছে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পোস্টার ও লিফলেট নিয়ে যান। সঙ্গে মইও রাখেন। নিজেই মই দিয়ে বিভিন্ন স্থানে উঠে নিজ হাতে পোস্টার টানিয়ে দেন।
এলাকায় ভোট চাইতে গিয়ে কাউকে সঙ্গে না রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, কর্মীবান্ধব আমাদের যেই নেতৃত্ব, সেখানেই মূল সমস্যা । ভোটের আগে কেউ যদি আমার জন্য কাজ করে, তাহলে আমি নির্বাচিত হলে আমার কাছে তার একটা চাহিদা থাকবে। একজন এমপি যত ভালো হোক না কেনো, কর্মী ভালো হবে; এটা আশা করা যায় না। কর্মী আসে তার স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে নয়। ন্যায্য চাহিদা হলে হয়তো আমি পূরণ করতে পারব। কিন্তু যদি কোনো অবৈধ সুবিধা নিতে চায়, তাহলে আমি তা দিতে পারব না। এ জন্য আমি সঙ্গে কাউকে রাখছি না। মানুষ আমার প্রচার দেখে নয়, সততা দেখে ভোট দেবে। আমি ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। নির্বাচিত হলে ভোটের প্রতিদানে উন্নয়নের কাজ করে যাব।
গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, কর্মী সঙ্গে রাখতে হলে অনেক টাকার দরকার। সেই টাকা আমার কাছে নেই। নির্বাচনের আগে আমার কাছে ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা শেষ। ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দিয়ে যে তাদের সম্মানী দেব, সেই টাকাও নেই। কেউ যদি স্বেচ্ছায় এজেন্ট হয় তাহলে হতে পারে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর-১ আসনে রয়েছে দুটি পৌরসভা ও ২৩টি ইউনিয়ন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪৯ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯০ হাজার ৪০৮ জন, নারী ১ লাখ ৭২ হাজার ৯১০ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ১১ জন রয়েছেন। এসব ভোটাররা ১৩৫টি ভোটকেন্দ্রের ৪৭৮টি কক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আসনটিতে অস্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৪৪টি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে ৬৭ হাজার ৩৩০ জন ভোটার বেড়েছে।
মন্তব্য করুন