বিভিন্ন সরকারি ছুটিতে বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে দর্শনার্থীর ভিড় জমে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিণমারীর নয়াবস্তী গ্রামে তিন বিঘার সূর্যপুরী আমগাছ দেখতে। ঈদের দিন থেকে কমপক্ষে সাত দিন চলে ওই এলাকায় দর্শনার্থীর ঢল। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি, ঈদুল আজহার ছুটিতে ঢল নামে দর্শনার্থীদের।
ঠাকুরগাঁওয়ের বিশাল আকৃতির এই গাছটির আনুমানিক বয়স ২২০ বছর বলে জানা গেছে। গাছটি প্রায় তিন বিঘা জমিজুড়ে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে রয়েছে। বিশাল এই গাছটিতে প্রতি বছর ১০০ থেকে ৩০০ মণ পর্যন্ত আম পাওয়া যায়। আয় হয় ১ থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। আম গাছটি টিকিটের বিনিময়ে দেখতে হয় দর্শনার্থীদের। আর এ উপার্জিত অর্থ খরচ হয় পরিচর্যাসহ দেখভালের কাজে।
গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ ফুট। এর পরিধিও ৩৫ ফুটের কম নয়। মূল গাছের তিন দিকে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে ২০টি মোটা মোটা ডালপালা। বয়সের ভারে গাছের ডালপালা নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ, আমের সময় সবুজ আমে টইটম্বুর থাকে এই গাছটি। আমগুলোর ওজনও হয় প্রতিটি ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম। প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে উঠা সূর্যপুরী আমগাছটি আজ ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ঈদের ছুটিতে গাছটি দেখতে আসেন সোহাগ আলম। তিনি জানান, কর্মসূত্রে বাইরে থাকি। সময় পেলেই এক নজর দেখতে আসি গাছটাকে। এর ঠান্ডা-শীতল ছায়ায় প্রাণ জুড়ে যায়। ঠাকুরগাঁওবাসী এ গাছটির জন্য গর্বিত।
আরেক দর্শনার্থী বিজন কান্তি জানান, এত বড় আম গাছ বাংলাদেশে আর দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার জানা নেই। বিশাল জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে গাছটি। শুনেছি গাছটির আমের স্বাদও খুব ভালো। খেয়ে দেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। পরিবার নিয়ে এসেছি এখানে সময় কাটাতে।
বিশাল এই আম গাছটির মালিক সাইদুর রহমান ও দেলোয়ার হোসেন। তারা পৈতৃক সূত্রে গাছটি পেয়েছেন।
এ বিষয়ে সাইদুর রহমান জানান, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া গাছটির বয়স আনুমানিক ২২০ বছরের মতো হবে। বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ দেখতে আসে। গাছটি দেখতে টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনপ্রতি ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে গাছটির পরিচর্যাসহ সার্বিক উন্নয়নের কাজ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গাছটিতে এখনো প্রচুর আম ধরে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ১০০ থেকে ৩০০ মণ পর্যন্ত আম পাওয়া যায়। কমপক্ষে ১ থেকে ২ লাখ টাকার আম বিক্রি করি প্রতি বছর। যারা এই আম গাছ দেখতে আসেন, তারাই আম কিনে নিয়ে যান। আমের মৌসুমে গাছের পাশেই বিক্রি করা হয়।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, হরিণমারীর আমগাছটি এ অঞ্চলের গৌরব। প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে গাছটি বিস্তৃত। গাছটি কীভাবে আরও বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
মন্তব্য করুন