কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ডাকাতিয়া নদীর শাখা নদনা খালের মুখে প্রায় ১৬ বছর আগে একটি স্লুইসগেটগেট নির্মাণ করা হয়েছিল। পানি নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ওই স্লুইসগেটটি খালের পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করা কৃষকদের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে- এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সকলের। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরের বছরই ওই স্লুইসগেট অকেজো হয়ে পড়ে। এরপর দীর্ঘ দেড় দশক পার হলেও আজও সেটি মেরামত করে পুনরায় চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের হাওরা এলাকায় কৃষক ও মানুষের কল্যাণের জন্য নির্মিত হওয়া ওই স্লুইসগেটটি এখন মানুষের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যেই উদ্দেশ্যে স্লুইসগেটটি নির্মাণ করা হয়েছে তার প্রতিফলন মোটেও ঘটেনি। উল্টো গেটটি খালের পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করা কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতিই করেছে। এ ছাড়া স্লুইসগেটটির কারণে ওই খালে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে নৌ-চলাচল। তাছাড়া এক সময় ওই খালে দেশীয় মাছের প্রাচুর্য থাকলেও এখন খালের মধ্যে দেশীয় মাছ নেই বললেই চলে। যার কারণে জেলেসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, গত প্রায় দুই বছর আগে নদনা খালটি খনন করা হয়েছে। এ জন্য এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে স্লুইসগেটটি অপসারণ করে নদী ও খালের পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করা জরুরি। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে চেয়ে আছেন তারা। সরেজমিনে জানা গেছে, স্লুইসগেটটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। পানি ধরে রাখতে না পারায় এটি কোনো কাজেই আসছে না। বিশেষ করে ইরি-বোরো চাষের সেচ মৌসুমে পানি সংকটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় হাজারো কৃষক। এ ছাড়া স্লুইসগেটটি অচল হয়ে পড়ে থাকায় ডাকাতিয়া নদী থেকে পানি ও দেশীয় মাছ খালে প্রবেশে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। আর খাল থেকে নদীতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কচুরিপানায় ভর্তি থাকে খালটি। স্লুইসগেটটি এলাকার কৃষি, নৌ-চলাচল, জেলেসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণ কুমিল্লা এবং উত্তর নোয়াখালীর পানি নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের আওতায় ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে ডাকাতিয়া নদীর নদনা খালের মুখে মনোহরগঞ্জের হাওরা নামক স্থানে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই স্লুইসগেটটি নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণের পর এটির আর কোনো মেরামত বা সংস্কার করা হয়নি।
স্লুইসগেটটির পাশেই অবস্থিত চড্ডা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক রুহুল আমিন বলেন, নদনা খালের পানি দিয়েই মনোহরগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক হাজার কৃষক ইরি-বোরো মৌসুমে ফসলি জমিতে সেচের পানির চাহিদা পূরণ করত। যার কারণে স্লুইসগেটটির সঙ্গে শুরু থেকেই এখানকার হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য জড়িত ছিল। কিন্তু নির্মাণের ১ বছর পর থেকেই স্লুইসগেটটি অকেজো হয়ে পড়ে। নির্মাণের পর থেকে এ পর্যন্ত এটি কৃষকদের তেমন কোনো উপকারে আসেনি। উল্টো অসংখ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই স্লুইসগেটটি।
উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো.আলমগীর হোসেন বলেন, এক কথায় বলতে গেলে স্লুইসগেটটি গত দেড় দশক ধরে আমাদের গলার কাঁটা। এটি নির্মাণের পর কৃষকের দুর্ভোগের পাশাপাশি ডাকাতিয়ার শাখা এ খালটিতে নৌযান চলাচল করতে না পারায় বন্ধ হয়ে গেছে নৌপথের বাণিজ্য। অথচ এক সময় এই নৌপথ অনেক সমৃদ্ধ ছিল। খননের আগে ১০ বছরের বেশি কচুরিপানায় ভর্তি ছিল খালটি। নদী থেকে খালের প্রবেশ মুখে মাছের বিচরণে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় দেশি প্রজাতির মাছ এখন আর আগের মতো দেখা যায় না এই খালে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন বলেন, আমি এখানে এসেছি কিছুদিন হলো। এখনো বিষয়টি ভালোভাবে জানি না। তবে শিগগিরই বিষয়টি সরেজমিনে বা খোঁজ নিয়ে দেখব। মূলত এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, পর্যাপ্ত বরাদ্দসহ বিভিন্ন কারণে ওই স্লুইসগেটটি মেরামত কাজে বিঘ্ন ঘটেছে। কৃষি খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বরাদ্দ প্রাপ্তিসাপেক্ষে শিগিগরই স্লুইসগেটটি মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
মন্তব্য করুন