আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসনের ১৪ দলের মনোনীত প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় ও পথসভায় দেখা মিলছে না পদ-পদবিধারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। এ নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা।
পিরোজপুর-২ আসন ৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত (নেছারাবাদ, কাউখালী, ভান্ডারিয়া)। এর মধ্যে নেছারাবাদ উপজেলায় রয়েছে সর্বোচ্চ ভোট ব্যাংক। সব প্রার্থীদের টার্গেট নেছারাবাদ উপজেলাকে ঘিরে। ভোটারদের মন জয় করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে প্রার্থীরা। চলছে গণসংযোগ, পথসভা ও ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করছে অনেকে। প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পর্যায়ের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল ও মিটিং সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বইছে ভোটের হাওয়া।
এদিকে ১৪ দলীয় জোট ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জাতীয় পার্টি জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে নৌকা মার্কায় দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন তার বিরুদ্ধে। মহিউদ্দিন মহারাজ এর দাবি তিনি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। সে আশাবাদী কাস্টিং ভোটের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবেন।
জাতীয় পার্টির জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ভোটে হার-জিত থাকবেই। কেউ যদি ভোটের আগেই হার মানেন তবে তার নির্বাচনে আসা উচিত নয়। যা কপালে আছে তাই হবে। জনগণ আমার পাশে আছে।
প্রায় চার লাখ ভোটারের জনপদ ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও স্বরূপকাঠি উপজেলা। শীতের ঠান্ডায় নদীবেষ্টিত এই এলাকায় এখন ভোটের উত্তাপ। দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। এই আসনে এবার সাতজন প্রার্থী। তবে নৌকা ও ঈগলের বাইরে কারও প্রচার নেই। গুরু শিষ্যের পোস্টার ঝুলছে একসাথে।
এদিকে নির্বাচনের আর কয়েক দিন বাকি থাকা সত্ত্বেও নৌকার সমর্থনে মাঠে নেই নেছারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুইদুল ইসলাম মুহিদ, স্বরূপকাঠি পৌর মেয়র গোলাম কবির, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস জাহানসহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা। এ ছাড়াও ৯০ শতাংশ ওয়ার্ড মেম্বার ও মহিলা মেম্বাররা জানিয়েছেন তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের সমর্থনে কাজ করবেন।
বিশিষ্টজনরা জানান, দলীয় সিদ্ধান্তে পিরোজপুর-২ আসনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে নৌকা মার্কায় মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত করায় প্রকৃত আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের মনোকষ্টের কারণ হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মহিউদ্দিন মহারাজের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
এদিকে পদ-পদবিধারী নেতাকর্মীদের সভা-সমাবেশে উপস্থিত হতে না দেখে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আর্থিক লাভবানের কথাও বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ বলছে মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়েছে নতুবা জনসমক্ষে আসছে না কেন। আবার কেউ দোটানায় পড়ে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে।
নেছারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবিধারী নেতাদের অনুপস্থিত দেখা গেছে, বর্তমানে যে নির্বাচনী পথসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাতেও দেখা মিলছে না উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। আবার অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের ঈগল মার্কার পথসভায় ইদানীং লক্ষ্য করা যায়। আবার কেউ কেউ প্রকাশ্যে ও অন্তরালে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছে কিন্তু স্টেজে উপস্থিত হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কানাইলাল বিশ্বাসের একাধিক স্টেজ বক্তৃতায় বলতে শোনা যায়, তিনি ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পরে দলীয় সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে সে শতভাগ নিশ্চিত যে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হবেন।
এ বিষয়ে মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, জনগণ আমাকে মেনে নিয়েছে। আমি পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলাম। জনগণ আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে, যে কয়েক দিনের জন্য নৌকা ধার করে এনেছে সে প্রকৃত আওয়ামী লীগের লোক নয়। নির্বাচনের পর সে পুনরায় সাইকেল মার্কার সমর্থনে নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করবে। প্রধানমন্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনের অলংকার হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, পিরোজপুর-২ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কানাইলাল বিশ্বাস প্রথমে নৌকা মার্কার মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। পরবর্তীতে শরিকদের আসন বিন্যাসের জন্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে এই আসনে নৌকা প্রতীক নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল মার্কা নিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সাথে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন।
মন্তব্য করুন