শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করেই বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি ও শিল্পকারখানায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় অর্ধেকে নেমে এসেছে পণ্য উৎপাদন। এ ছাড়া আবাসিক গ্রাহকরা সময়মতো গ্যাস না পাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন।
শিল্পমালিকদের অভিযোগ, গ্যাস সংকট থাকায় প্রতি বর্গফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকার কথা থাকলেও অনেক কারখানায় সেটি নেমে আসে মাত্র দুই তিনে। আবার কোনো কোনো কারখানায় নেমে এসেছে শূন্যতে। গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় চাহিদামতো উৎপাদন করতে না পারায় আর্থিক লোকসানে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শ্রমিকরা বলছেন, গ্যাসের কারণে কারখানা বন্ধ থাকলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। আর উৎপাদন না হলে মালিকরা বেতন ভাতা দিতে চাইবেন না।
এ ব্যাপারে টাওয়েল টেক্স লিমিটেড কারখানার ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন জানান, তাদের কারখানা অনেকদিন ধরেই গ্যাস সংকটে রয়েছে। বারবার অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে গ্যাসের চাপ থাকার কথা ১৫ পিএস আই সেখানে দুই/তিন বা একেবারেই শূন্য হয়ে আছে। এতে কারখানা উৎপাদন ৫০ ভাগ কমে গেছে।
শিল্পমালিকরা আরও অভিযোগ করেন, তিতাস গ্যাসের সংকট ও গ্যাসের চাপ কম থাকায় ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার করে উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এতে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাদমা গ্রুপের পরিচালক সোহেল রানা বলেন, তিতাস গ্যাস সংকট থাকায় আমাদের উৎপাদন কমে গেছে। লাইনে গ্যাসের চাপ একেবারেই কম। গত ১৩ তারিখ কারখানায় ১৯ ঘণ্টা গ্যাসের চাপ ছিল ২ পিএসআই, পরের দিন ১৮ ঘণ্টা এবং গতকাল ৮ ঘণ্টা গ্যাসের চাপ ২ পিএসআই ছিল। এত কম চাপে কারখানায় মেশিন চালানো অসম্ভব। এতে কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। মেশিনপত্র চালাতে ডিজেল চালিত জেনারেটর ব্যবহার করায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে।
এদিকে, গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে প্রয়োজনমতো গ্যাস নিতে পারছেন না যানবাহনের চালক ও মালিকরা। প্রেসার কম থাকায় প্রায় প্রতিটি পাম্পে দেখা গেছে এ চিত্র।
এ ছাড়া আবাসিক এলাকায় সকালে গ্যাসের চাপ একেবারে কমে যায়। এতে রান্না-বান্নার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কারখানা শ্রমিকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষকে।
ইটাহাটা এলাকার বাসিন্দা লাভলী বলেন, অনেক দিন ধরেই ভোর ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। এতে রান্না-বান্না করতে সমস্যা হচ্ছে।
শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, গাজীপুরে ৫ হাজারের বেশি কলকারখানা রয়েছে যার অধিকাংশ গ্যাস নির্ভর। আর এ খাতে কাজ করছে ২২ লাখ শ্রমিক। প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ না পেলে সংকট আরো বাড়বে বলে মনে করছেন মালিক, শ্রমিক ও পোশাক মালিকদের সংগঠনের নেতারা।
মন্তব্য করুন