পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌর শহরের মোড়ে তখনও কাক ডাকা ভোর। চারদিকে ঘন কুয়াশা। হু হু বাতাস, মাঘের হাড়কাঁপানো শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। চোখ পড়ল বেশকিছু মানুষের জটলার দিকে। কৌতূহলবশত মানুষের জটলার দিকে গিয়ে জানা যায়, এটি আসলে মানুষ কেনাবেঁচার হাট। মাত্র ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় সারা দিনের চুক্তিতে বিক্রি হয় মানুষ। অবাস্তব মনে হলেও প্রতিদিন ভোরে মানুষ বেচার এমন হাটের দেখা মিলবে পিরোজপুরের পৌর শহরে। প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে এ শ্রম বেচাকেনার হাট।
সড়কের পাশ ঘেঁষে অনেকটা ঘুম-ঘুম চোখেই দাঁড়িয়ে ছিলেন পান্না মিয়া। ঘুম ভালো করে না ছাড়লেও কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছিল তার চোখ। পান্না মিয়াসহ আরও কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঠবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ও অন্য জেলা থেকে শ্রমিকরা ভিড় করেন এসব হাটে। বেশির ভাগই কৃষিকাজ, নির্মাণ ও গৃহস্থালির কাজ করেন। কেউ কেউ আসেন দু-এক মাসের জন্য। থাকার সুবিধা কিংবা ভালো কাজ পেয়ে গেলে অনেকে থেকে যান বছরের পর বছর।
গুলিশাখালী ইউনিয়ন থেকে আসা শ্রমিক শাহাজান আলী বলেন, পরিবারের সদস্য পাঁচজন। এলাকায় কাজ কম। যে কাজ আছে তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই এখানে এসেছেন। প্রতিদিন কাজ পান না। সপ্তাহে দু-এক দিন শূন্য হাতে ফিরতে হয়।
হাটে মিঠাখালীর শ্রমিক মোস্তফা সঙ্গে কথা হলে তিনিও জানান, ধান রোপণ ও ধান কাটার সময় মঠবাড়িয়া উপজেলাতে প্রতিদিন এক হাজারের মতো শ্রমিক বিক্রি হয়। অন্য সময় দিনে বিক্রি হয় দুই-তিনশ শ্রমিকের শ্রম। দিনে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয় নির্মাণশ্রমিক ও কৃষিশ্রমিকের শ্রম। আর দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা চুক্তিতে বিক্রি হন গৃহস্থালির শ্রমিকরা।
পৌর শহরের আব্দুর রহমান জানান, বাড়িতে নির্মাণ কাজের জন্য শ্রমিক দরকার। তাই ভোরেই চলে এলাম মানুষ কেনাবেচার হাটে। স্থানীয় শ্রমিকদের থেকে অপেক্ষাকৃত কম মজুরিতে এখানে শ্রমিক পাওয়া যায়, তারা কাজেও বেশ আন্তরিক।
মন্তব্য করুন