পঞ্চগড়ে কনকনে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
আগুন পোহানোর ঘটনায় গত এক মাসে ২৯ জন অগ্নিদগ্ধের তথ্য জানিয়েছে সদর হাসপাতাল। এদের মধ্যে কয়েকজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শীতপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে টানা শৈত্যপ্রবাহে জবুথবু জনজীবন। চরম দুর্ভোগে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ। কনকনে ঠান্ডায় দুস্থ মানুষজন রাতেও ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। জেলা শহর ছাড়াও জেলার প্রত্যন্ত এলাকার দুস্থদের খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এরইমধ্যে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে আগুন পোহানোর সময় গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে চলতি জানুয়ারি মাসেই ১৫ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন।
গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে বাড়ির উঠোনে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের কাছে বসে হাত ও পায়ে উষ্ণতা নিচ্ছিলেন সত্তোর্ধ্ব ফেলাই বোওয়া নামে এক বৃদ্ধা। হঠাৎ তার পড়নের কাপড়ে আগুন ধরে যায়। একপর্যায়ে পুড়ো শরীরে আগুন লাগলে পরিবারের সদস্যরা গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আগুনে তার মুখ, গলা, বুক ও কোমর থেকে পা পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। ৮ দিন ধরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসারত অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে তিনি মারা যান। ফেলাই বেওয়া পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার তেলিপাড়া মহল্লার বাসিন্দা।
এ ছাড়া তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর এলাকার তমিজ উদ্দিনের স্ত্রী রেজিয়া বেগম, উপজেলা সদরের কামাত কাজলদিঘি ইউনিয়নের টুনিরহাট এলাকার মালেকুল ইসলামের ছেলে ওয়াবুল ইসলাম (২১), গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের সিপাহিপাড়া ফুটকিবাড়ি এলাকার বিপ্লব হোনের চার বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ, সাতমেরা ইউনিয়নের গোয়ালঝাড় এলাকার দুলাল হোসেনের তিন বছরের কন্যা আসমা উল হুসনা, অমরকানা ইউনিয়নের শিংপাড়া এলাকার মাসুদ রানার তিন বছরের ছেলে আবরারসহ আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন নিয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর এলাকার রেজিয়া বেগমের ছেলে হাসিবুল ইসলাম বলেন, আমার মা সকালে আগুন পোহাচ্ছিলেন। হঠাৎ তার কাপড়ে আগুন লেগে যায়। এক পর্যায়ে মায়ের হাত ও পা পুড়ে যায়। পরে মাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন।
ফেলাই বেওয়ার মেয়ে নহিমা বেগম বলেন, আগুন পোহাতে গিয়ে আমার মা কীভাবে যে দগ্ধ হলেন আমরা বুঝতে পারিনি। তাকে দেখা মাত্রই আগুন নিভিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে গেছে। খুব কষ্ট পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আমার মা মারা যান। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মখলেছুর রহমান বলেন, আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধের শিকার ফেলানি বেওয়া চিকিৎসারত অবস্থায় মারা গেছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। গত মাসের ১৫ তারিখ থেকে আজ পযর্ন্ত ২৯ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন। আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসার চেষ্টা করছি। এদের মধ্যে কয়েকজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শীতের কারণে আগুন পোহানোর বিষয়ে আমাদের সচেতনতা সৃষ্টি প্রয়োজন বলে জানান এই চিকিৎসক।
মন্তব্য করুন