নওগাঁর বদলগাছীতে জাল স্বাক্ষরে চুক্তিনামা করার অভিযোগ উঠেছে সুজাউল ইসলাম কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তিনি আবুল কাশেম সরদার নামের এক ব্যক্তির স্বাক্ষর জাল করে গভীর নলকূপ স্থাপনের একটি চুক্তিনামা করেছেন।
এমন জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পেরে গত বুধবার (২৪ জানুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী আবুল কাশেম।
একটি দেড়শ টাকার স্ট্যাম্পে প্রথম পক্ষ আবুল কাশেম সরদার এবং দ্বিতীয় পক্ষ সুজাউল ইসলাম (কুদ্দুস) নামে একটি চুক্তিনামায় দেখা যায়, উপজেলায় শ্যমাহার মৌজায় জে-এল নং-১৫০, খতিয়ান নং হাল-১৫২, হাল-১১২ নং দাগে ১৯৬ শতক জমি আছে প্রথম পক্ষ আবুল কাশেমের নামে। সেই জমির ১০ শতাংশের ওপর দ্বিতীয় পক্ষ এলাকার কৃষকের স্বার্থের কথা চিন্তা করে প্রথম পক্ষ সুজাউল ইসলামকে সেচ কাজ পরিচালনা করার জন্য গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক দ্বিতীয় পক্ষ ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি বিশ বছরের জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করেন। দ্বিতীয় পক্ষ চাইলে আজীবন সেচকাজ পরিচালনা করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয় চুক্তিনামায়।
এক্ষেত্রে প্রথম পক্ষের ওই পরিমাণ সম্পত্তির বার্ষিক পানির ভাড়া দ্বিতীয় পক্ষকে দিতে হবে না। যেটা জমির ভাড়ার মধ্যে কেটে দেওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করা হয় চুক্তিনামায়। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের কোনো চুক্তিনামা হয়নি বলে অভিযোগ করেন আবুল কাশেম সরদার। তাই প্রতিকার চাইতে গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। সঙ্গে এসেছিলেন প্রায় অর্ধশতাধিক এলাকাবাসী।
উপজেলার কেশাইল গ্রামের মৃত কমর উদ্দীন সরদারের ছেলে আবুল কাশেমের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কোলা ইউনিয়নের কোলা গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে সুজাউল ইসলাম উপরোক্ত দাগের ১৯৬ শতাংশ জমির এক পাশে গভীর নলকূপ স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়ে আমার স্বাক্ষর জাল করে একটি চুক্তিপত্র করেছে। কিন্তু এই রকম কোনো চুক্তিপত্রে আবুল কাশেম সরদার স্বাক্ষর করেননি। ওই জায়গায় তাকে গভীর নলকূপ স্থাপনের কোনো অঙ্গীকারও করেনি আবুল কাশেম সরদার। তাই তার এইরকম জালিয়াতির বিচার চাই।
আবুল কাশেম সরদারের ছেলে বকুল হোসেন বলেন, শ্যামাহার মৌজায় আমাদের কিছু জমি আছে। এলাকার পরিচিত হওয়ায় জীবিকা নির্বাহের জন্য আমার বাবা মৌখিকভাবে সুজাউলকে বলেছিলেন শ্যালো মেশিন স্থাপন করতে।
এলাকার বিদ্যুৎ, আলতাফ হোসেন সরদার, শাহিন, মিলন হোসেন, সামছুল আলম, সাহাবুল ও ওমর ফারুকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোক আসেন অভিযগ জমা দিতে। বকুলের মতো তারাও অভিযোগ করে বলেন, সুজাউল ইসলাম অনেক মিথ্যা বলেন। তিনি মিথ্যার আশ্রয় বেশি নিয়েছেন। তিনি যে কত মানুষের ক্ষতি করেছেন তার হিসাব নেই। এছাড়া পানির সরকারি রেটের চেয়ে তিনি কমপক্ষে এক হাজার টাকা করে বেশি নিয়েছেন প্রতি বিঘায়।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সুজাউল ইসলাম মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, কাশেম সরদার সম্পর্কে আমার আত্মীয় হয়। সে চঞ্চল নামের এক ছেলেকে খুব বিশ্বাস করত। এই চঞ্চলের মাধ্যমেই আমাকে জমির দলিল পর্যন্ত দিয়েছে কাশেম। আমাকে যদি অনুমতি না দিত, তাহলে আমি কীভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করতাম। আর সেই গভীর নলকূপ আমি প্রায় ১০ বছর ধরে কীভাবে ব্যবহার করতাম। এছাড়া গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য অফিসে একটা প্রমাণ দিতে হয়েছে। সেই জন্য চঞ্চলসহ অনেকের সামনে কাশেম স্বাক্ষর করেছেন। এটা তারই স্বাক্ষর। তবে তিনি আমাকে ওই পরিমাণ জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৃপ্তি কণা মন্ডল মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, যেহেতু এটা সেচ সংক্রান্ত বিষয়, তাই উপজেলা বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ইঞ্জিনিয়ারকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন