নাটোরের গরিবের ডাক্তার বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান (৭১)। একটি ভাঙা মাটির ঘরে ৪৫ বছর ধরে বিনামূল্যে তিনি দরিদ্র রোগীদের দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসাসেবা। এখন পর্যন্ত কয়েক লাখ রোগী তার চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে এই সেবা দিয়ে আসলেও কারও কাছ থেকে কোনো আর্থিক বা অন্যকোনো সহযোগিতা তিনি গ্রহণ করেন না। নিজ এলাকা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা আসেন তার কাছে চিকিৎসাসেবা নিতে। দরিদ্র রোগীসহ তার চিকিৎসাসেবা পেয়ে সবাই খুশি।
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পশ্চিম সোনাপাতিল গ্রামে ভাঙা মাটির দেওয়ালের একটি ঘর। এই ঘরে বসেই গত ৪৫ বছর ধরে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন গরিবের ডাক্তার মজিবর রহমান।
যেখানে অন্যান্য চিকিৎসকরা উচ্চহারে ফিস নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেন, ঠিক সেই সময়ে বিনামূল্যে তিনি রোগী দেখেন ও ব্যবস্থাপত্র দেন। জেলার বাইরে থেকেও অনেক রোগী তার কাছে আসেন চিকিৎসাসেবা নিতে। তিনিও হাসি মুখে তাদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যেন কৃতার্থ হন।
এলাকাবাসী ও তার কাছে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, শহরের ডাক্তারদের কাছে গেলে নানা রকম পরীক্ষা দিয়ে তিন/চার হাজার টাকা খরচ করান। কিন্তু এই ডাক্তার কাছে এলে তিনি কোনো পরীক্ষা ছাড়াই যত্নসহকারে রোগী দেখেন ও ব্যবস্থাপত্র দেন। তার ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ খেয়ে তারা ভালোও হয়ে যান। এই ডাক্তার গরিবের ডাক্তার। আমরা অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আসি চিকিৎসার জন্য। তার কাছে এলে তিনি বাচ্চাদের আদর করেন।
সোনাপাতিল গ্রামের ডা. শেখ মজিবর রহমান সাধারণত মা ও শিশুদের চিকিৎসা দেন। ছোটবেলা থেকেই দেখছি এই ডাক্তার বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। এই এলাকা ও আশপাশের জেলা থেকেও অনেক রোগী তার কাছে আসেন চিকিৎসা নিতে। সব ওষুধ কোম্পানি তাকে বিনামূল্যে ওষুধ দিতে চাইলেও তিনি নেন না। ভালো ভালো কোম্পানির ওষুধ তিনি বিনামূল্যে নেন এবং সেগুলো আবার গরিব রোগীদের বিনামূল্যে দিয়ে দেন। আসলে এই সমাজে তার মতো এমন নির্লোভ মানুষ সচরাচর দেখা যায় না।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী রানা আহম্মেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। কোনো দিন কারও কাছ থেকে তিনি একটা টাকাও নেননি। এখানে এলে ডাক্তার যত্ন সহকারে বাচ্চাদের দেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসেবা দেন।
নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জাম আসাদ জানান, ডা. মজিবর রহমান একজন অত্যন্ত সৎ ব্যাক্তি। দীর্ঘদিন ধরে তারা দেখছেন একটি ভাঙা ঘরে বসে তিনি চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ তার কাছে এসে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়ে যাচ্ছেন। তার যেটুকু আছে তাই দিয়েই কাজ করে। অভাব অনটনের মধ্যেই তিনি চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
নাটোর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও গরিবের ডাক্তার মজিবর রহমানের চিকিৎসাকেন্দ্রটির অবস্থা ভঙ্গুর। সেটি সংস্কার করা প্রয়োজন। আমি বিষয়টি নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে নতুন ঘরের ব্যাপারে চেষ্টা করব।
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা ও ডাক্তার মজিবর রহমান বলেন, বিনা খরচে চিকিৎসা দেওয়ার একটাই কারণ- গ্রামের লোক চিকিৎসা পায় না। গ্রামের লোকের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। ঠিক করেছি যতদিন বাঁচব ততদিন এই কার্যক্রম চালিয়ে যাব। নাটোর, গাইবান্ধা, রংপুরসহ দেশের বাইরের রোগীদেরও চিকিৎসাসেবা দিয়েছি। তবে যেভাবে এই মাটির ঘরটি ভেঙে যাচ্ছে, তাতে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। সরকার বা যে কেউ যদি নতুন একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়, তাহলে যতদিন বাঁচব ততদিন এই সেবা দিয়ে যেতে পারব।
মন্তব্য করুন