কথায় আছে ভালোবাসা বাধা মানে না। বয়স হিসাব করেও ভালোবাসা হয় না। স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করেও হয় না। বলা যায়, ভালোবাসার সম্মোহনী শক্তি সব প্রতিকূলতাকেই হার মানায়। ঠিক তেমনটাই ঘটেছে প্রেমের টানে ফিলিপাইন থেকে লক্ষ্মীপুরে ছুটে আসা জোয়ান ডিগুসমান লেগুমবাইয়ের জীবনে। নাম-ধর্ম পরিবর্তন করে তার বর্তমান নাম নাজিফা রাশিদ আমিরা।
এরইমধ্যে নাজিফার সংসার আলো করে এসেছেন এক পুত্র সন্তান। ৩ মাস বয়সী ওই সন্তানের নাম নুর মোহাম্মদ নিহাল। সন্তানের সঙ্গে খুনসুটি আর সংসারের ব্যস্ততায় কাটছে তার সময়।
সমাজের চোখে যা অসংগতিপূর্ণ, প্রেমের ক্ষেত্রে তা খুব সহজেই আশকারা পায়। এ দম্পতির জীবনে তাই সত্যি হয়েছে। সারা পৃথিবীতেই স্বামী-স্ত্রীর বয়স নিয়ে একটা অলিখিত নিয়ম চালু আছে। যদিও ৩৩ বছর বয়সী নাজিফার জীবনে তা বাধা হয়নি। তার স্বামী লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী গ্রামের বাসিন্দা নাইমুর রশিদ।
বিয়ের পর বিগত একবছর থেকে সুখেই সংসার করে চলছেন নাইম-নাজিফা দম্পতি। সরেজমিনে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রয়ারি) দুপুরে বাড়িতে গেলে যায়, সন্তানসহ স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদের সঙ্গে হাসিখুশি দিন কাটছে তার। সংসারের নানা কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন।
দেখা যায়, বাড়িতে অতিথি দেখেই হাসিমুখে সালাম জানিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন নাজিফা। অল্প দিনেই সংসারের দায়িত্ব বেশ পোক্ত হাতেই সামলাচ্ছেন। বিদেশি পুত্রবধূকে নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট বাড়ির লোকজন। প্রতিবেশী-আত্মীয়রাও তার আচরণে মুগ্ধ।
জানা যায়, এক বছর আগে সুদুর ফিলিপাইন থেকে বাঙালি প্রেমিকের বাড়িতে ছুটে আসেন নাজিফা রাশিদ আমিরা। এ সময় বাড়ির লোকজনসহ আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা সাদরে গ্রহণ করে। গেল বছরের ৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় নাজিফা-নাইমের। বিয়ের পর আত্মীয়দের বাড়িতে নিমন্ত্রিত হন এ দম্পতি।
বিয়ের ৬ মাস পর এ দম্পতি ফিলিপাইনে নাজিফার মায়ের বাসায় বেড়াতে যায়। সেখানেও সাদরে সমাদৃত হন তারা। সেখান থেকে ফিরে যান কর্মস্থল মালয়েশিয়ায়। নভেম্বরে তারা বাংলাদেশের বাড়িতে ফেরেন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন নাজিফা। বর্তমানে সংসারের দেখভাল করে বেশিরভাগ সময় কাটে তার।
নাজিফা জানায়, স্বামীর সংসারে ভালো আছেন। বাংলাদেশ ও বাঙালি কালচারও তার ভালো লাগে। যদিও বাংলা ভাষা তেমন একটা রপ্ত করতে পারেননি তিনি। চেষ্টা করছেন বাংলাভাষা ও আরবি শেখার।
তিনি জানান, বাংলাদেশে এসে তার খুবই ভালো লাগছে। এখানকার মানুষের সঙ্গে সহজেই মিশতে পারছেন। বাংলাদেশের খাবার ও সংস্কৃতি তার পছন্দ হয়েছে।
স্বামী মো. নাইমুর রশিদ বলেন, আলহামদুলিল্লাহ্। সুখেই কেটে যাচ্ছে সংসার জীবন। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি নিয়ে সে আমাদের সকলের সঙ্গেই নিজেকে মানিয়ে নিয়ে চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো কিছু নিয়েই তার ওপর কেউ অসন্তুষ্ট হয়নি। সেও সন্তুষ্ট নতুন এ জীবন নিয়ে।
তিনি জানান, বিয়ের আগে ৮ বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরমধ্যে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্তে ছুটি নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। নিজের এবং ওই তরুণীর বাবা মায়ের সম্মতিতে তাকে বিয়ে করেছেন। এ সময় এ দম্পতি তাদের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য সবার দোয়া প্রার্থনা করেন।
নাইমের মামাতো ভাই তারেক বলেন, নাজিফা ভাবি খুবই মিশুক প্রকৃতির। তিনি সবার সঙ্গেই হাসিখুশি চলেন। আমরা তার সঙ্গে সময়গুলো দারুনভাবে উপভোগ করি।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী গ্রামের বাসিন্দা মো. নাইমুর রশিদ মালয়েশিয়া প্রবাসী। তিনি সেখানে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। চাকরির সুবাধে তার সঙ্গে পরিচয় হয় ফিলিপাইনের আরনেসতা লেগুমবাই ও ইমেলদা লেগুমবাই দম্পতির মেয়ে জোয়ান ডিগুসমান লেগুমবাইয়ের। পরিচয় থেকে শুরু হয় তাদের প্রেম। বাংলাদেশে এসে খ্রিস্টান ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী গ্রামে প্রেমিক নাঈমের বাড়িতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয়। সেখানে বিদেশি ওই তরুণীকে দেখতে শতশত মানুষ ভিড় জমায়। এর আগে একই বছর ৩ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) নাইমের বাড়িতে আসেন ফিলিপাইনের ওই তরুণী। ৬ জানুয়ারী শুক্রবার ওই বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে ধুমধাম করে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
মন্তব্য করুন