বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে রাস্তায় চলাচল করছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পথচারী ও যানবাহন চালকরা। উপজেলার কয়েকটি সড়ক ভেঙে যাওয়ায় চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দের। যার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট ছোট দুর্ঘটনা। এমন অবস্থায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের সড়কগুলো মেরামতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন। জনদুর্ভোগ চরম আকারে ধারণ করেছে। পুরো ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেখা যায়, হাজিপুর ইউনিয়নের কটারকোনা বাজার-ইউপি অফিস ১ কিমি সড়ক, মনু-তিলকপুর ৪ কিমি সড়ক, হাজিপুর-পীরের বাজার ২ কিমি সড়ক, হাজিপুর শিরিষতলা ভায়া পরীজাঙ্গার পর্যন্ত ৩ কিমি সড়কগুলো হলো এলজিইডির এ গ্রেডের অতি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়কগুলোর প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থানে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, সর্বশেষ ২০১৮ সালের বন্যায় হাজিপুর ইউনিয়নের এই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ ছাড়া গত তিন বছর ধরে এই সড়কসহ অন্যান্য সড়ক ব্যবহার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে মনু নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। সেই সড়ক ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বড় বড় পাথর ও বালুবোঝাই গাড়ি এই সড়ক দিয়ে চলাচল করার কারণে কটারকোনা, তুকলী হাসিমপুর, মনুস্টেশন বাজার, হাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সম্মুখ অংশ, সোনা দিঘিরপার থেকে পীরের বাজার পর্যন্ত সড়কে প্রায় পাঁচ শতাধিক জায়গায় রাস্তায় ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়া ভারী যানবাহন (লোড ট্রাক) চলাচলের কারণে অনেক জায়গায় সড়কের পিচ উঠে গিয়ে ইটের খোয়া বের হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস দেওয়া হলেও কার্যত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান, আলম সাইফুল, মাজহারুল ইসলামহ অনেকেই জানান, মনু নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভারী যানবাহন দিয়ে যত্রতত্র পাথর ও বালু পরিবহন করার কারণে সড়কগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। ছোট যানবাহন দিয়ে বর্তমানে স্থানীয়রা এসব সড়কে চলাচলের সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। সর্বশেষ তিন মাস হাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশা উল্টে দুজন যাত্রী আহত হন। সড়কের মেরামত কাজ করা জরুরি হয়ে পড়ছে।
হাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী তীর রক্ষা কাজের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভারী যানবাহন দিয়ে মালামাল পরিবহন করার কারণে ইউনিয়নের কটারকোনা-মনুস্টেশন সড়ক, মনুস্টেশন থেকে ইউনিয়ন পরিষদের সম্মুখ অংশ, হাজিপুর বাজার থেকে-পীরের বাজার পর্যন্ত সড়কের শত শত স্থানে ভাঙন দিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানচলাচলসহ পথচারীরা পড়েছেন ভোগান্তির মধ্যে। সড়কটির মেরামত কাজ করার জন্য একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী তারেক বিন ইসলাম বলেন, ইউনিয়নের কটারকোনা-মনুস্টেশন সড়কে পাউবোর বেড়িবাঁধের কাজ চলমান আছে। কাজ শেষ হলে সড়কে নতুন করে মেরামত করা হবে। এদিকে মনু-তিলকপুর সড়কে মেরামত কাজের অনুমোদন হয়েছে। সেটির প্রাক্ষলণ তৈরি করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়াও বাকি সড়কগুলো মেরামত করার জন্য প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, সরকারের বৃহৎ মনু নদীর তীররক্ষা প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের জন্য সড়কগুলো ব্যবহার করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে সড়কগুলো বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উন্নয়ন সমন্বয় সভায় প্রকল্প এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব সড়ক মেরামত করা হবে এবং বাকিগুলো এলজিইডি করবে এমনটি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মন্তব্য করুন