‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’ বিষয়টি দেয়ালে স্পষ্ট লেখা থাকলেও বাস্তব চিত্র ঠিক তার উল্টো। সেই দেয়ালের পাশেই যত্র তত্র আবর্জনার স্তূপ। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশপাশে দেখা মিলবে এমন চিত্র।
জাজিরার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বছরের পর বছর অবহেলায় এবং অযত্নে পড়ে থাকা অপরিচ্ছন্ন খালের পাশে হাসপাতালের দেয়াল ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে স্থায়ী ময়লার ভাগাড়। ময়লা ফেলার জন্য পৌরসভার নির্দিষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ডাম্পিং ইয়ার্ড) না থাকাকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, যেভাবে দিনকে দিন ময়লা ফেলা হচ্ছে তাতে ব্যাপক হারে মশার বংশ বিস্তারসহ ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের ফলে এখানে আগতদের মধ্যে ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন বায়ুবাহিত রোগবালাই ছড়ানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও নতুন করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন।
জাজিরা পৌরসভার তত্ত্বাবধানে এলাকাটি থাকলেও এই জায়গাটি পরিষ্কার করার বিষয়ে ব্যাপক উদাসীন রয়েছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতাল মোড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অধিকাংশ দোকানপাটের যাবতীয় ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় এই জায়গাটিতে। যার ফলে হাসপাতালের দেয়ালে ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’ বাক্যটি স্পষ্ট করে লেখা থাকলেও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ থাকায় দিনরাত দেয়াল ঘেষেই মূত্রত্যাগ করতে দেখা যায় পথচারীদের, যা আরও অতিরিক্ত দুর্গন্ধ তৈরি করে পরিবেশ দূষণের পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি করছে।
একাধিক ভুক্তভোগী জানায়, জাজিরা এখন ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা হলেও পৌর শহরে নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে। শহরের কোথাও পরিচ্ছন্নতা চোখে পড়ে না। এ অবস্থায় বাড়তি দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে যত্রতত্র আবর্জনার ভাগাড়।
পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কাজ করা সংগঠন বিডি ক্লিনের জাজিরার সমন্বয়ক মুক্তা আক্তার কালবেলাকে বলেন, আমরা ২০১৯ সাল থেকে জাজিরা উপজেলায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে আসছি। পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপজেলাকে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে বিভিন্ন দাবি তুলে আসছি। জাজিরা পৌরসভার বর্তমান মেয়র দায়িত্বে আসার আগে আমাদের কথা দিয়েছিলেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণের ব্যবস্থা করবেন। অথচ দায়িত্বে আসার প্রায় তিন বছর অতিক্রম হলেও তিনি তার কথা রাখেননি। আশা করি বর্তমান মেয়র তার কথামতো শিগগিরই একটি ডাম্পিং ইয়ার্ড স্থাপনের ব্যবস্থা করবেন।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, এটা স্থানীয় মেয়রের কাজ। আমরা এই মাসে ১৫ লাখ টাকা পৌরকর পরিশোধ করেছি। মেয়রকে হাসপাতালের ময়লা নেওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত গাড়ি নেই ও ময়লা ফেলার জায়গা নেই।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল এবং উপজেলা পরিষদের সামনে থাকা এই জায়গাটি ময়লার স্তূপে পরিণত হওয়ায় আশপাশের পুরো এলাকাজুড়ে ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। যার ফলে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীসহ জনসাধারণ।
এ ব্যাপারে জাজিরা পৌরসভার মেয়র মো. ইদ্রিস মিয়া কালবেলাকে বলেন, আমাদের পৌরসভায় ময়লা ফেলার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই, আমি এরইমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য জমি চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করি অল্প কিছু দিনের মধ্যেই জায়গা পেয়ে যাব।
বিষয়টি নিয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম লুনার জানান, বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। আমি উপজেলা সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করার চেষ্টা করব।
মন্তব্য করুন