চারদিকে সবুজে ঘেরা প্রকৃতি আর গ্রাম বাংলার অপার সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্যকে রংতুলির আঁচড়ে জীবন্ত করে তুলতে ব্যস্ত খুদে আঁকিয়েরা।
কেউ ক্যানভাসে প্রকৃতি, কেউ বিভিন্ন জাতের পশুপাখি, আবার কেউ গ্রামবাংলার মেঠোপথসহ জীবন্ত জনজীবন তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন। পুকুরপাড়, বাড়ির উঠান, মেঠোপথে বসে সাড়ে তিন শতাধিক শিশুশিল্পীর নিখুঁত রংতুলির আঁচড়ে জীবন্ত করে তুলছেন নানা ধরনের চিত্রকর্ম। ইটপাথরের শহরে চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ থাকা এসব শিশুর প্রকৃতির মাঝে একাকার করে নিতেই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু নাট্যম। প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিশুরা এই ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী আর্ট ক্যাম্প।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তিন দিনব্যাপী আর্ট ক্যাম্প ঘিরে গ্রামজুড়ে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। যান্ত্রিক জীবন থেকে দূরে গিয়ে শিশু ও তাদের অভিভাবকরা যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়।
৩৬৫ জন শিশুশিল্পী কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে দলবেঁধে ছবি আঁকতে বসে। এ সময় তারা কল্পনার জগৎ থেকে বের হয়ে প্রকৃতিকে উপলব্ধি করে তাদের চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তোলেন। প্রকৃতির সান্নিধ্য পেয়ে তাদের রংতুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠে এক একটি চিত্রকর্ম।
আর্ট ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী শিশুশিল্পীরা বলেন, আমরা বাসায় বা শ্রেণি কক্ষে বসে কল্পনার ওপর নির্ভর করে ছবি আঁকতে হয়। কিন্তু প্রকৃতির কাছে এসে চিত্রাংকন করতে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। আমরা প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে দেখে আমাদের ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলছি। তাছাড়া শহুরে জীবনযাপনের কারণে গ্রামীন জনজীবন সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা ছিলোনা। কিন্তু এই ক্যাম্পের মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির পাশাপাশি গ্রামের জনজীবনের সঙ্গেও পরিচিত হতে পেরেছি।
শিশু নাট্যমের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদ নিয়াজ মো. খান বিটু বলেন, প্রতি বছরই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে এই আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করে শিশু নাট্যম। এ নিয়ে নবম বারের মতো আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। শিশুদের প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে এসে তাদের মানবিক করে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, শিশু শিল্পচর্চার লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু নাট্যম।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. রুহুল আমীন বলেন, ‘আমি মনে করি এটি একটি অনন্য উদ্যোগ। প্রকৃতির মাঝখানে ছোট্ট ছোট্ট সোনামণিরা আট ক্যাম্পে অংশ নিচ্ছে। এতে তারা মানবিক হবেন পাশাপাশি দেশের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবেন। সারাদেশেই এমন উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।’ কাঞ্চনপুর মলাই মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রুহুল আমিন।
মন্তব্য করুন