ঠাকুরগাঁওয়ে সামাজিক বনায়ন সুবিধাভোগীর তালিকায় রয়েছেন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীর স্ত্রী। সামাজিক বনায়ন নীতিমালা অনুসারে প্লট বরাদ্দ পাওয়ার কথা দরিদ্র, দুস্থ নারী ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী। কিন্তু এ নিয়ম তোয়াক্কা করেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সদর ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ২১৩ কিলোমিটার সড়কের পাশে রোপন করা হয়েছে সামাজিক বনায়ন। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সৃজন করা কয়েকটি বিটের প্লট প্রাপ্তির তালিকায় দেখা যায়, বরাদ্দ পাওয়া পাওয়া বেশির ভাগই ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা।
জানা গেছে, সামাজিক বনায়ন নীতিমালা অনুসারে ভূমিহীন, ৫০ শতাংশের কম ভূমির মালিক, দুস্থ নারী, অনগ্রসর গোষ্ঠী, দরিদ্র আদিবাসী, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা অথবা মুক্তিযোদ্ধার অসচ্ছল সন্তান সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী নির্বাচিত হবেন। কিন্তু এ নিয়ম উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি দুলাল তিগ্যা।
সদর উপজেলার গিলাবাড়ী এলাকার মকবুল হোসেন বলেন, তার এলাকায় সামাজিক বনায়নে প্লট বরাদ্দের তালিকায় বেশির ভাগই বড় ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি।
একই এলাকার সালেহা বেগম বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর তিন সন্তান নিয়ে কষ্টে আছি। সামাজিক বনায়নে নিজের নামটা দিতে কতজনকে ধরলাম। কিন্তু আমার নাম কেউ দিলনা। এখন দেখি সব ধনীরা পাইছে।
সদর উপজেলার বড় খোঁচাবাড়ী হতে কদমতলা পর্যন্ত আরেকটি সামাজিক বনায়নের প্লটে বেশিরভাগ ধনীদের তালিকা দেখা গেছে।
খায়রুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, এ প্লটের বেশির ভাগ কোটিপতি কৃষক, মাদরাসার শিক্ষক ও বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন।
সাহিরুল ইসলাম নামে একজন বলেন, প্লটের পূর্ব বেগুনবাড়ী দাখিল মাদরাসার প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন ও তার স্ত্রী, বড় ভাই আরেকটি মাদরাসার প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী মানিকও রয়েছে এই তালিকায়।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী এলাকার দিনমজুর জামিরুল ইসলাম বলেন, সামাজিক বনায়নে নতুন বাগানে আমার নামটি বনকর্মকর্তা দেয়নি। অনেকবার তার কাছে গিয়েছিলাম। এখন যারা বনায়নে গাছ লাগিয়েছে তাদের অনেকে বড় ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সামাজিক বনায়ন নার্সারী ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফিউল আলম মন্ডল বলেন, সামাজিক বনায়নের প্লট বরাদ্দ তালিকা গুলো ২০০১-২০১১-১২ সালের দিকে করা। ওই সময়ে বন বিভাগের দায়িত্বরত যারা প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন তারা কী কারণে এ নীতি অনুসরন করেননি তা আমি জানি না।
মন্তব্য করুন